মোঃ সহিদ মাহমুদ
অনেকদিন পর কিতাব আলীর সাথে দেখা, কিতাব আলী আমার বাল্যবন্ধু। ব্যস্ততার কারনে দেখা সাক্ষাত হয়না। যদিও একই শহরে আমাদের বসবাস তবু দেখা সাক্ষাৎ নেই। আসলে আমরা সবাই এতো বেশি ব্যস্ত যে কেউ কারো আর খোঁজ খবর নিতে পারিনা।
কিতাব আলী আলী বিয়ে করেছে প্রায় ১৫ বছর হলো, ১ ছেলে ১ মেয়ের জনক সে। ৫ বছর প্রেমের পর বিয়ে, যদিও পরিবাবের তেমন কেউ রাজি ছিলো না তবু আমরা বন্ধুরা বিশেষ ভুমিকা রাখার জন্য বিয়ে হয়েছে। বিশেষ করে আমি, সিয়াম, জামাল, আরিফ দুই পরিবারকে অনেক বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছিলাম। বিয়ের পর পরই মেয়ে আনিকার জন্ম, এর পর ৭ বছরের বিরতি।
পরে ছেলে শুভর জন্ম। ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে কিতাব আলীর খুব সুন্দর সংসার। আমি এক সময় অনেক যেতাম ওদের বাসায়, কিতাব আলীর বৌ আমাকে দাদা ভাই বলে ডাকে আর ওদের মেয়ে আনিকা আমাকে নাম ধরে ডাকতো, মাঝে মাঝে বন্ধু বলেও ডাকতো।
খুব সুখী পরিবার ওদের। দেখা সাক্ষাৎ না হলেও আমি ওদের খুব মিস করি। কিন্তু আজ কিতাব আলীকে দেখে আমি একটি শক খেলাম। এটা কোন কিতাব আলী? অনেক শুকিয়ে গেছে, মুখে খোচা খোচা দাড়ি। আমি বললাম এ কি অবস্থা তর বন্ধু? কি হয়েছে তর, বৌ ছেলে মেয়ে কেমন আছে? কিতাব আলী কোন কথা বললো না, শুধু আমার দিকে চেয়ে আছে। এক সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
পরে আমি ওকে নিয়ে সবুজ রোডের হায়দারের চায়ের দোকানে গিয়ে বসি। জানতে চাই ওর সব কিছু। কিতাব আলী বলে বন্ধু এমন জীবন তো আমি চাই নি, আমি চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকতে, কিন্তু কেন এমন হলো?
আমি বলি কি হয়েছে তর আমাকে সব খুলে বল?
কিতাব বলতে শুরু করে ওর জীবনের গল্প। জানিস বন্ধু বিয়ের পর থেকে খুব আনন্দের মধ্যে দিয়েই কেটে যাচ্ছিল আমাদের দিনগুলো, তুই তো জানিস আমার বেতন খুব বেশী না, কিন্তু যে বেতন পাই সেই টাকায় বৌ খুশি না। সব সময় সংসারে অশান্তি। বৌয়ের চাহিদা মেটাতে আমি অনেকের কাছ থেকেই টাকা ধার নিয়েছি, কিন্তু সেই টাকা পরিশোধ করতে পারি না। প্রতি মাসে বেতন পেয়ে পুরো টাকা বৌয়ের হাতে দিতে হয়, না দিলেই ঝগড়া। আমি যদি বলি অনেকেই আমার কাছে টাকা পায় সেগুলোও তো দিতে হবে। কিন্তু সে কোন কথা শোনেনা, তার চাহিদার সাথে আমি আর পারছি না। এই দেখ তর কাছ থেকেও তো টাকা নিয়েছি, তর টাকা দিতে পারি না বলে আমি তর সাথেও দেখা করি না। আমি বলি বাদ দে এসব, আমার টাকা ফেরত দিতে হবে না।
জানিস বন্ধু আমি সব সময় তর টাকা ফেরত দিতে চাই, কিন্তু কি করবো বল? আমার হাতে কোন টাকা থাকে না, কাউকে ১ কাপ চা খাওয়াতে পারি না। বাহিরে একটু দেরি হলেই শুরু হয় রাগারাগি। অফিসে আসার আগে আমি বাসায় অনেক কাজ করি, আবার অফিস থেকে ফিরেও অনেক কাজ করি যাতে বৌ খুশি যাকে। কিন্তু না।
তুই বল বন্ধু এত অশান্তি কি ভালো না?
মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করি। কিন্তু সন্তানদের কথা চিন্তা করে সেটাও পারি না। আমি না থাকলে ওদের কি হবে।