হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধিঃ
নতুন কারিকুলামের শিক্ষক প্রশিক্ষণে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মোজাফফর হোসেনের বিরুদ্ধে ।
অথচ ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার অর্থ ব্যয়ের কোনো হিসাবই জানেন না। এরই প্রেক্ষিতে ডিভিশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক শ্রেণী শিক্ষকদের ৭ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় একযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময় ফোল্ডার,প্যাড, কলমসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়ার কথা। আর এ জন্য শিক্ষক প্রতি বাজেট রয়েছে ২০০ টাকা। কিন্তু ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক প্রশিক্ষণে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোজাফর হোসেন পলাশ। প্রায় সাড়ে ৭০০ জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক, সুপারিনটেন্ড, সহকারি সুপারিনটেনডেন্ট ও নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ ৩ দিনের এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
এ প্রশিক্ষণে সামগ্রীক ক্রয়ের দায়িত্বে রয়েছেন মোজাফর হোসেন পলাশ। এসব মালামাল ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে । তিনি প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিম্নমানের খাতা পেন্সিল কলম রাবার ক্রয় করার মধ্য দিয়ে। চলতি বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর সৈয়দ মাহাফুজ আলী স্কিম
পরিচালক,এসইডিপি/ডিএনসি/প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ/২৫/২০২৩/৪৮৬ নং স্মারকে প্রশিক্ষণের এক আদেশ জারি করেন। আদেশে বলা হয়েছে নতুন কারিকুলাম বিস্তরন,মনিটরিং ও মেন্টারিং বিষয়ক ৩ দিন ব্যাপি প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক, সুপারিনটেনডেন্ট,সহ সুপার ও নিন্মমাধ্যমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষনের বাজেট প্রনয়ন করা হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমের বিস্তরণ, মনিটরিং ও মেন্টরিং বিষয়ক তিনদিনের প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে। উক্ত প্রশিক্ষণ ১৮ মার্চ ধেকে শুরু হয়ে ২৯ মার্চ ঝিনাইদহ সাধু প্রতিরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের মোজাফফর হোসেন পলাশ সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে তিনি নিজের মত প্রশিক্ষণের সকল ক্রয় সামগ্রী থেকে শরু করে সকল প্রকার দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসারের
দায়িত্বে ছিলেন ঝিনাইদহ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক। তিনি ২৭ মার্চ অবসর গ্রহন করেছেন। ঝিনাইদহ সাধুপ্রতিরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণে প্রতিজন শিক্ষকদের ২০০ টাকার খাতা কলম প্যাড সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সামগ্রী দেওয়ার কথা থাকলে ও দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকার নিন্মমানের সামগ্রী। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনকারিরা বলছেন, তাদের দেওয়া হয়েছে একটি প্লাষ্টিকের ফাইল, একটি ১৫ টাকার কলম, একটি পিন্সিল, পেনসিলি কাটার মেশিন ও একটি রাবার। যে সব মালামাল দেওয়া
হয়েছে তার বাজার মুল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকার উর্ধে নয়। যে কারনে সমুদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত না দিয়ে মোজাফফর হোসেন পলাম আত্মসাত করেছেন। নিয়ম রয়েছে সমুদয় টাকা ব্যায় না হলে সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠাতে হবে। এই মোজাফর
হোসেন পলাশ চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত রয়েছেন প্রায় দশ বছর। অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে সহকারী পরিদর্শক মোজাফফর হোসেন পলাশের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভ্যাট আইটি সহ ২০০ টাকা মূল্যের পণ্য সামগ্রী শিক্ষকদের কিনে দেওয়া হয়েছে। এখন ব্যস্ত আছি, আপনি অফিসে আসেন কথা হবে।
এদিকে ২৭ মার্চ অবসরে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মালেক জানান, ক্রয় সামগ্রীর বিষয়ে কত বাজেট শিক্ষকদের আমি কিছুই জানি না, এসব মোজাফফর হোসেন পলাশ ক্রয় করেছেন।তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে বাজেট অনুযায়ী মালামাল না দিয়ে নিম্নমানের মালামাল দেওয়ার কথা শুনে নিজেরই লজ্জা লাগছে বলেও জানান তিনি।