হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজ জাহান শেলী সরকারি “পিবিজিএসআই” স্কিমের বরাদ্দকৃত শিক্ষার্থীদের বাবদ ১০% এর ৫০ হাজার টাকা ও সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বাবদ ১৫% এর ৭৫ হাজার টাকা ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিজেস্ব প্যাডে রাজস্ব ডাকটিকিটের উপর স্বাক্ষর নিয়ে প্রতিবন্ধী দুই শিক্ষার্থীর হাতে মাত্র ৪ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে ২৫ হাজার টাকা লেখা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন প্রধান শিক্ষক। ঐ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী দুজন হলো সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদনী খাতুন ও নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া বাকপ্রতিবন্ধী রাহাদ হোসেন। একইভাবে অত্র বিদ্যালয়ের সুবিধাবঞ্চিত ১৫ জন শিক্ষার্থীর প্রতি জনকে ৫ হাজার করে মোট ৭৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনপ্রতি মাত্র ১৫ শত টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ৫ হাজার টাকা লেখা কাগজে রাজস্ব ডাকটিকিটের উপর স্বাক্ষর করিয়ে নেন।এই ১৫ জন শিক্ষার্থী হলো- ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া যুথি খাতুন, আরাফাত হোসেন ও মোঃ নুরনবী, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ইসরাত জাহান, নীলা খাতুন ও রাহুল হোসেন,অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া আনিকা রহমান আব্দুর রহমান ও নাহিদ হাসান, নবম শ্রেণী পড়ুয়া জেসমিন খাতুন, শামিমা খাতুন ও নাহিদ হাসান, এবং দশম শ্রেণী পড়ুয়া জিসান হোসেন ও সুলতানা খাতুন। পারফরম্যান্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশন স্কিমের আলতায় স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদানের ৫ লাখ টাকা ব্যয় ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ের পরিপত্রে উল্লেখিত নিয়ম নীতি না মেনে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন বলে জানা যায়।শুধু প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ব্যায়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে প্রধান শিক্ষক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ৯৪ হাজার ৫ শত টাকা। অনুদানের এই স্কিমে ২০% হারে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বরাদ্দ ১ লাখ টাকা,স্কুলের বইপত্র, লাইব্রেরী ও উন্নয়ন বাবদ ৩০% হারে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং শিক্ষার্থীদের কমনরুম উন্নয়ন বাবদ ২৫% হারে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। সম্প্রতি নতুন যোগদানকৃত এই প্রধান শিক্ষক সরকারি এইসব অর্থ আত্মসাতের মধ্য দিয়ে সরকারের নেওয়া মহৎ উদ্যোগে বাধাগ্রস্ত করেছে। সরজমিনে ২ অক্টোবর বিদ্যালয়টিতে যেয়ে প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ফরমায়েশি সমন্বয় সভাই অংশগ্রহণ করতে বাইরে অবস্থান করছেন। এসময় সাংবাদিকের উপস্থিতের কথা জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকের স্বামী মুঠোফোনের সাংবাদিককে অযাচিত কথা বলে।বিদ্যালয়টির প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম থাকা আনিকা রহমান ও আব্দুর রহমানের সাথে কথা হলে তারা জানায়, প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন শ্রেণির ১৫ জনকে ১৫ শত করে জন প্রতি ও ২ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ৪ হাজার করে টাকা দেন।
ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজাহান শেলীর নিকট অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী এবং তার উপস্থিতিতে সব খাতে ব্যয় করা হয়েছে। গ্রামের ইস্কুলে চাকরি করলে নিয়ম অনিয়ম সব করতে হয়। সবকিছু ঠিকঠাক করেই করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগটি কেটে দেন।
ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এ কে জিল্লুর রহমান আজাদ বলেন, আমি,মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও সকল শিক্ষকবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অর্থ দেওয়া হয়েছে। নিয়মের ব্যাপারটা আমার সঠিক জানা নেই। প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন। তবে কম টাকা দিয়ে বেশি টাকার কাগজে স্বাক্ষর করে নেওয়া অন্যায়। শিক্ষার্থীদের পাওনা টাকা প্রয়োজনে আবার ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,পরিপত্রের বাইরে সরকারি বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করা কোন সুযোগ নেই। আমি প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম অনুযায়ী অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেছি।কোন প্রতিষ্ঠানে অনুদানের এই স্কিমের অর্থ আত্মসাৎ বা তসরুপ হলে তা খতিয়ে দেখা হবে। ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য সঠিক নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।