পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেল মানিক স্বপ্ন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার

লেখক: আরিফুল ইসলাম (আরিফ)
প্রকাশ: 18 hours ago

ফুলবাড়ী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

মানিক রহমান। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। দুই পা থাকলেও একটি লম্বা ও অন্যটি খাটো। অসাধারণ অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকায় সে সুস্থ ও স্বাভাবিক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে তিনি।

অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।এর আগে, ২০২২ সালেও ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছেন।

এসএসসিতেও যেভাবে নিজের ল্যাপটপ পা দিয়ে চালিয়ে পরীক্ষার ফল বের করেছেন। ঠিক একইভাবে পা দিয়ে ল্যাপটপ চালিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা রেজাল্ট দেখেন মানিক রহমান। এবারও পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পর মানিকের জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর শুনে সবাই মুগ্ধ।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক রহমানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও মা প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে।

বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলকে পুঁজি করে সে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পা দিয়ে লিখে শুধু ভালো রেজাল্ট নয়, সে পা দিয়ে মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী। তাই মানিক রহমান ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে সবার দোয়া কামনা করেন। বাবা-মায়ের বড় ছেলে মানিক রহমান। তার দুটো হাত না থাকলেও পড়ালেখা থেকে কখনও পিছিয়ে পড়েনি এই লড়াকু সৈনিক মানিক রহমান।

মানিকের মা মরিয়ম বেগম জানান, আমার দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম নবম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক যে শারীরিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসি ও এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন, সে যেন সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে যেন ভালো কোনো প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।

তার মা মরিয়ম বেগম আরও জানান, তার যত্ন করার জন্য একজন লোক সার্বক্ষণিক থাকেন। সেই লোককে মাসে থাকা খাওয়াসহ ৮ হাজার বেতন দিতে হয়। ছেলের খরচও মাসে ২০ হাজার লাগতো। সে বুয়েটে পড়ার জন্য বর্তমানে ঢাকায় কোচিং করছে। সেই সাথে কোনো প্রতিবন্ধী সন্তানদের কখনো অবহেলা করবেন না। তাদেরকে সব সময় ভালোবাসা দিয়ে পড়াশুনায় মনোযোগী কররে তুলবেন। দেখবেন আপনাদেরও সন্তানও একদিন ভালো কিছু করবে এটা আমার বিশ্বাস।

মানিক রহমান বলেন, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এর আগে এসএসসিতেও পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তা, বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোয়ায় এইচএসসিতেও ভালো করতে পেরে আমার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী সবাই খুশি হয়েছে। আমি যেন সবার দোয়া ও ভালোবাসায় প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।

মানিকের সার্বক্ষণিক যত্ন নেয়া শামসুল হক জানান, মানিক শারিরীক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বাবা-মা তার দেখাশুনার জন্য আমাকে মাসিক বেতন দিচ্ছেন। আমি তার অত্যন্ত আদর যত্ন করছি। আসলে শুধু মানিক বললে হবে না। সে সত্যিকারের হীরা মানিক। সে যে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সত্যি আমি মহাখুশি হয়েছি। সে পারবে তার বাবা-মা ও নিজের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের মো. আবুল কালাম আজাদ অধ্যক্ষ জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে যেমন তার বাবা- মার কাছে হীরা মানিক। ঠিক আমাদের কাছেও সে হীরা মানিক। তার ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠানের সবাই মুগ্ধ। দোয়া করি তার স্বপ্নগুলো যেন পূরণ হয়।

error: Content is protected !!