সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জের সাতটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে সুনামগঞ্জ শহরেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকা পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে রয়েছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এছাড়া জগন্নাথপুর ও মধ্যনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কিছু এলাকায় ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি, জগন্নাথপুর উপজেলার কয়েকটি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
ঢলের পানিতে তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর ও বালিজুরি ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সাত উপজেলার পাশাপাশি পানি প্রবেশ করেছে সুনামগঞ্জ শহরেও। শহরের উকিলপাড়া, সাহেববাড়ি ঘাট, আরপিননগর, জামাইপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
এছাড়া সোমবার মধ্যরাত থেকে ভারি বর্ষণের কারণে শহরের কালীবাড়ি, উকিলপাড়া, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, হাছনগর, কাজির পয়েন্ট, বিলপাড়সহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোরবানির ঈদের দিনে বিভিন্ন এলাকা পানি নিমজ্জিত হওয়ায় পশু কোরবানি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন পৌর শহরের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক ও লোকজন জানান, এবার মৌসুমের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে রবিবার। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল তীব্র বজ্রপাত। ফলে ঈদের আগের দিনটি আতঙ্কে কেটেছে শহরের বাসিন্দাদের। বৃষ্টির কারণে সোমবার সকালে অনেক ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত আদায় করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ মানুষ নামাজ পড়েছেন স্থানীয় মসজিদে।
ছাতক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরন বলেন, “উপজেলার ইসলামপুর, কালারুকা, নোয়ারাই, চরমহল্লা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের ধনীটিলা-ছনবাড়ী বাজার সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে সড়কের কয়েকটি অংশ। নিজগাঁপ রতনপুর, ছনবাড়ী, নোয়কুট, রহমতপুর, বনগাঁও, দারোগাখালী, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।”
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীতীরের বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার সকাল সন্ধ্যাকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে তিনি জানান। সোমবার সকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলার সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। তবে এখনও কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেনি। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার ও চালসহ ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।