মিঠু মুরাদ,পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি:
পাটগ্রামে ভুট্টাচাষীদের বোবাকান্না, দেখার কেউ নেই- এমন একটি মন্তব্য করে ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট শেয়ার করেন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক আনারুল ইসলাম রাজু ।
(৭মে) রাতে তার নিজের ফেসবুক আইডিতে কৃষকের মাঠের ছবি দিয়ে তিনি লিখেন ,
উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। কৃষিপ্রধান এই জেলার অবহেলিত হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা একসময় মরণব্যাধি ক্যান্সারের অন্যতম উপাদান তামাক চাষে বিখ্যাত হলেও কালের বিবর্তনে বর্তমানে ভুট্টার দখলে। তিস্তানদী বেষ্টিত এ অঞ্চলটি ভুট্টাচাষের উপযোগী হওয়ার প্রধান কারণ নদীভাঙ্গন ও বন্যার প্রভাবে এখানকার অধিকাংশ ভূমি দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ ও বালি দ্বারা গঠিত যা ভুট্টাচাষের জন্য উপযুক্ত। জেলাটিতে বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য কল-কারখানা গড়ে উঠেনি। ফলে এখানকার অধিকাংশ মানুষকে কৃষির উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে চরাঞ্চলের কৃষকদের প্রধান আয়ের উৎস হলো ভুট্টা চাষাবাদ। বাদবাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কিছু সংখ্যক জীবন-জীবিকার সন্ধানে আপনজনদের মায়া-মমতা বিসর্জন দিয়ে গৃহ ত্যাগ করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। এ অঞ্চলের কৃষকেরা প্রধান ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষাবাদ করে নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি একদিকে যেমন আর্থ-সামাজিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে তেমনি অপরদিকে রাষ্ট্রের মানুষ, পশু-পাখি ও মাছের খাদ্য সংকট দূর করাসহ জীবন রক্ষাকারী ঔষধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহে অবদান রাখছে। দেশীয় উৎপাদনের ফলে আমদানি কমিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধিতেও যথেষ্ট অবদান রাখছে।
বিগত বছরগুলোতে ভুট্টাচাষের উপকরণগুলোর বাজারদর কম, অধিক বৃষ্টিপাত এবং ভুট্টার বিক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় তাদের উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রয় করে বেশ মুনাফা পেলেও এবারে তাদের মাথায় হাত পড়েছে! কারণ-
বর্তমান মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ (৪০কেজি) শুকনো ভুট্টা ১৩৫০-১৪০০ টাকা মূল্যে বিক্রি হলেও হঠাৎ করে অজানা-অদৃশ্য কারণে প্রতিদিন অস্বাভাবিক দরপতন ঘটতে ঘটতে বর্তমানে স্থানভেদে ৮৫০-৯০০টাকা মণে নেমেছে, যা কৃষকদের আর্তনাদের অন্যতম কারণ। অথচ বিগত বছরে একই সময়ে একই ভুট্টা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৩৫০-১৪০০টাকায়।
বৈষয়িক মন্দা, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও ডলার সংকটের অজুহাতে দেশের বাজারে ভুট্টাচাষের প্রধান উপাদানগুলো বিশেষ করে বীজ, ডিজেল, কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবছরে চেয়ে এবছর কৃষকদের ভুট্টা চাষের খরচ ৩৫-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং গতবছরের চেয়ে এবারে ভুট্টার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কথা অথচ প্রতিমণে মূল্য কমেছে ৫০০-৫৫০ টাকার মতো। এটা কৃষকদের নিকট মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে দাড়িয়েছে!
বর্তমানে নিজস্ব জমির ভুট্টা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অসহায় বর্গাচাষীদের প্রতি বিঘা জমিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে ৫০০০-৬০০০ টাকা। উপরন্তু নিঃস্ব কৃষকদের মধ্যে যারা গ্রাম্য মহাজনের নিকট থেকে গলাকাটা সুদে ঋণ নিয়ে এবং একশ্রেণির অসাধু অতিরিক্ত মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর কাছে থেকে সার, কীটনাশক ও বীজ বাকিতে কিনে ভুট্টা চাষাবাদ করেছে তাদের দুঃখের সীমা-পরিসীমা নাই।
কৃষকদের বাচাঁনোর জন্য রাষ্ট্রের বর্তমান শাসকদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং ভুট্টার বাজারদর দ্রুত পতনের কারণ অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করছি।
এই অঞ্চলের কৃষক ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- আপনারা ফসলের ন্যায্য মূল্য আদায়ে এবং আপনাদের দুঃখ কষ্টগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট পৌঁছানোর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে অথবা নিজ নিজ অবস্থা থেকে জেগে উঠুন।
কৃষক বাঁচলে দেশ বাচঁবে, আমরা বাঁচবো।
তাই আসুন আমরা কৃষকদের দুঃখকষ্ট লাঘবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই এবং কৃষকদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করি।