পাইকগাছা সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ভৈরবী রানী রায়ের বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে অপসারণসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে। বুধবার সকাল ১০ টায় শিক্ষার্থী ঝৃতুর নেতৃত্বে দু শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের সকল ক্লাস রুম ও বিদ্যালয়ের মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মেইন সড়কে অবস্থান করে প্রধান শিক্ষিকা ভৈরবী রানী রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রধান শিক্ষিকা ভৈরবী রানী রায় ৭/৫/২৪ তারিখে পাইকগাছা সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় যোগদান করার পর থেকে মাসে এক দিন স্কুলে আসে। বেতন নিয়ে চলে যাওয়ার সময় শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার রুটিন,সিলেবাস,ক্লাস রুটিন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের সনদ , ছুটির নোটিশ কিছুই দেয় না বা পাইনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষিকা না থাকলে বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে, কারন সব কিছু স্বাক্ষর করার মালিক প্রধান শিক্ষিকার, তিনি না থাকলে আমরা অসহায়,পারিনা শিক্ষার্থীদের কৈফিয়ত বা অভিভাবকদের প্রশ্নের জবাব দিতে।
সকাল ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে তাদের বক্তব্য অভিযোগ শিক্ষার্থী ঋতু ও অভিভাবক সাবেক কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ ও শিক্ষকদের মধ্যে সিনিয়র শিক্ষক আঃ ওহাব সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরবেন।ও সকল সমস্যার কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন সমাধান দেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়। এ সময় নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীনের সাথে ছিলেন ওসি শবজেল হোসেন।
খুলনা পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসালয়টির রুগ্ন দশা!
উজ্জ্বল কুমার দাস, পাইকগাছা, খুলনা।।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু এই হাসপাতালটিতে ডাক্তার সংকট দীর্ঘদিনের। সংকট আছে চিকিৎসা সরঞ্জামের। অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ পাঁচ মাস।
সবমিলে এই হাসপাতালটিই বর্তমানে রুগ্ন দশার মধ্যে আছে। ফলে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও খাতা-কলমে আছেন মাত্র ছয়জন। তাদের মধ্যে একজন সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত।এছাড়াও, সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, পরিবেশ অপরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুম, নিম্ন মানের খাবার-সহ নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে হাসপাতালটিতে।
তেলের অভাবে ঠিকমতো চলে না জেনারেটর। গত ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। স্থানীয়রা জানান, ৩১ বেডের নির্মিত হাসপাতালটি ৫০ বেডে উন্নীত করা হলেও ৫০ বেডের সুবিধা বা সেবার মান বা জনবল বাড়ানো হয়নি। পাইকগাছা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি। দেয়া হয়নি চাহিদামতো জনবল।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদে রয়েছেন। জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ ১১টি, রয়েছেন দুইজন, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ একটি, যাহা শূন্য রয়েছে।
মেডিকেল অফিসাসের সাতটি পদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন, দুইটি ডেন্টাল সার্জন পদের মধ্যে একজন, মার্সিং সুপার ভাইজারের একটি পদ কিন্তু কেউ নেই। সিনিয়র স্টাফ নার্স থাকার কথা ৩২২ জন, কিন্তু আছেন মাত্র ২১ জন। এছাড়া, মিডওয়াইফ পদে চারজনের স্থলে রয়েছেন তিনজন, মেডিকেল টেকনোলজস্টে সাডটি পদের স্থলে তিনজন রয়েছেন। শূন্য রয়েছে একটি কম্পিউটার অপারেটরের পদ, একটি প্রধান সহকারীর পদ, একটি হেলথ এডুকেটরের পদ, সুইটি ক্যাশিয়ারের পদ, একটি প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটর অপারেটরের পদ। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদ ১০টি, রয়েছেন আটজন, স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সংখ্যা ১২টির মধ্যে রয়েছেন ২১ জন, মিডওয়াইম ৬৫টির মধ্যে রয়েছেন ৪৫ জন, অতিরিক্ত সহকারী কাম কম্পিউটর অপারেটরের ৪টি পদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন, আটটি অফিস সহায়ক পদের মধ্যে আছেন একজন। সবমিলে কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ রয়েছে ১৯৪টি। কিন্তু আছেন মাত্র ১০১ জন। ৯৩টি শূন্য পদ নিয়ে হাসপাতালটিরই রীতিমতো রুগ্ন দশা।জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন এখানে।
যাদের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ভর্তি হওয়ার মতো রোগী থাকেন ৩০ জনের মতো। কিন্তু এই সুযোগ না থাকায় চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।এদিকে, হাসপাতালের একমাত্র এক্সরে মেশিনটি মাঝেমধ্যে ঠিক হলেও তা প্রায় সময় বন্ধ থাকে। প্যাথলজি বিভাগ থাকার পরও পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য রোগীদের পাঠানো হয় বেসরকারি ডাইপসস্টিক সেন্টারে।হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার সোলাদানা গ্রামের রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা দিয়ে বাইরে থেকে করে আনতে বলেছেন। আমরা গরীব মানুষ। টাকা দিয়ে বাইরে থেকে টেস্টস্ট করানোর অবস্থা নেই।সরল গ্রামের মোমেনা খাতুন বলেন,অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎস্যার জন্য সকাল আটটার দিকে হাসপাতালে এসেছি।
সাড়ে ১০টা বাজলো। এখনও ডাক্তার আমার মাকে দেখিনি। আউটডোরে টিকিট নিয়ে বসে আছি। সেবা নিতে এসে সেবা পাচ্ছি না।মারামারি ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোজিনা বেগম বলেন, হাসপাতালের দেওয়া খাবারের মান ভাল না। খাবার প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি অল্প কদিন আগে এখানে যোগদান করেছেন।
হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদের জনবল পূরণ হলে জনগণ যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা পাবে। বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন।