মোঃ এমদাদ মাগুরা প্রতিনিধি:
প্রত্যন্ত গ্রামের স্নাতক শিক্ষার্থী মোঃ নাজমুল হুসাইন (২৪)। অভাবের সংসারে হাল ধরতে এবং নিজে কিছু করার জন্য মাশরুম চাষকে বেছে নেন। চাকরির পেছনে না ছোটা এ তরুণ বছর ঘুরতেই সফলতার দেখা পান। তবে খুব সহজে এ সফলতা আসেনি। এজন্য করতে হয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। বর্তমানে তিনি মাশরুম বিক্রি করে মাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আয় করেন।
তরুণ এ উদ্যোক্তার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক মোঃ ইসলাম বিশ্বাসের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মোঃ নাজমুল হুসাইন বড়। তিনি মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।মোঃ নাজমুল হুসাইন বলেন, ‘পড়াশোনা করে চাকরি করবো এ অপেক্ষায় না থেকে নিজে কিছু একটা করার চেষ্টা করি। প্রথমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মাথায় নিই কিন্তু কোনো কিছুতেই স্থির হতে পারছিলাম না। পরে সিদ্ধান্ত নিই মাশরুম চাষ করবো।
২০১৭ সালে যুব উন্নয়ন থেকে এগ্রিকালচার এন্ড হর্টিকালচার বিষয়ে আবাসিক এক মাস প্রশিক্ষণ গ্রহন করি।তখন থেকেই উদ্যেক্তা হবো বলে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।কিন্তু টাকার অভাবে শুরু করতে পারি নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে কৃষি অফিস থেকে একটা মাশরুম চাষের প্রদর্শনী দেন এবং কৃষি অফিসার হুমায়ন কবির তাকে মাশরুম চাষের জন্য মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন।প্রশিক্ষণ শেষ করে টিউশনি করে অল্প অল্প করে টাকা বিনিয়োগ করি।প্রথম বছর ২০১৯ সালে ১৮,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১,০২,০০০ টাকা লাভ করে।২০২০ সালে লাভ হয় ২,৫০,০০০ টাকা। আস্তে আস্তে ব্যাপক পরিসরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।বর্তমানে তার ফার্মে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে এবং সিজোনাল কাজের সময় ২০-২৫ জন মতো কাজ করে।নাজমুল হুসাইনের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০ টি খামারি রয়েছে। সে তাদের বীজ সংগ্রহ করে এবং উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি করে দেন।নাজমুল হুসাইন উৎপাদিত মাশরুম দিয়ে পাউডার,কেক,বিস্কুট,জ্যাম জেলি নিয়ে কাজ করছে।
২০২৩ সালে তরুণ উদ্যেক্তা মাগুরা জেলা প্রশাসক মাগুরার সফল উদ্যেক্তার স্বকৃতি দিয়েছেন।
পরিবার প্রথমদিকে নাজমুল হুসাইন এর কাজে সাড়া না দিলেও পরে বুঝতে পারেন।
মোঃ নাজমুল হুসাইন বলেন, ‘একটি পলিব্যাগে কাঠের বা ধানের গুঁড়া, গমের ভুষি, ধানের খড়, পানি, পিপি, নেক, তুলা ও মাশরুমের মাদার দিতে হয়। বীজগুলো ট্রান্সফার করার ২০-৩০ দিনের মাথায় এটি রান হয়ে যায়। প্যাকেট কেটে ৫ থেকে ১০ দিন রাখতে হয়। এর মধ্যেই ফলন শুরু হয়। একটি স্পন থেকে ৩ মাসের মধ্যে চারবার ফলন পাওয়া যায়। ব্যাগগুলো ফেলে না দিয়ে জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’
নাজমুলের গড়ে তোলা ‘নাজমুল ড্রিম মাশরুম সেন্টার’ অবসর সময়ে কাজ করেন এলাকার কয়েকজন নারী। ফলে তারাও স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। বর্তমানে মাশরুম সেন্টারে ঋষি ও ওয়েস্টার,মিল্কি ধরনের মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন তিনি ৭৫-১৫০কেজির মতো মাশরুম তোলেন। তা ২২০-২৫০ টাকা কেজি দরে মাগুরা,ঝিনাইদহ, যশোর,ফরিদপুর,গোপালগঞ্জ,ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন।
কৃষি উপসহকারী আশরাফুল আলম বলেন,নাজমুল একজন তরুণ উদ্যেক্তা।মাশরুম চাষে তার ব্যাপক আগ্রহ ছিলো।তাছাড়াও মাশরুম সুস্বাদু খাবার। কৃষি অফিস থেকে তাকে সবোর্চ্চ সহযোগিতা করছি।আমরা আশা করি তরুণ যুবক সবাই যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষ করতো তাহলে বেকারত্ব সমস্যা দূর হতো এবং নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারতো।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন ,মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার।নাজমুল একদিন অফিসে এসে উদ্যোগের কথা জানান এবং সহযোগিতা চান। তরুণদের এ ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তাই মাশরুম সেন্টার দেখতে আসি। উপজেলা কৃষি অফিস তার সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছে এবং নানা ধরনের সহায়তা দিচ্ছে’।