সাজ্জাদ তুহিন,নড়াইল প্রতিনিধি:
নড়াইলে দীর্ঘ ২৯ বছর পরে হলেও আগামী ২৮ মে জেলা যুবলীগের সম্মেলন কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে পদ প্রত্যাশীদের দৌড় ঝাপ।
সংগঠনে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাসীরা ইতিমধ্যে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, নড়াইলের দুই সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদ পেতে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নড়াইল জেলা যুবলীগের ৯জন সভাপতি এবং ১০জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীর জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে উল্লেখযোগ্যরা হলেন নড়াইল জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোঃ গাউছুল আজম মাসুম (ভিপি মাসুম) যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ মাহফুজুর রহমান, জেলা যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ শরিফুল ইসলাম নান্তু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামরুজ্জামান কামাল, মাসুদুল হাসান গুলুসহ অনেকে।
সাধারণ সম্পাদক পদে উল্লেখযোগ্য পদপ্রত্যাশিরা হলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোকন কুমার সাহা, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি জাহাঙ্গীর হোসেন ইকবাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৌমেন বসু, সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মীনা মরফিদুল হক শিল্পী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তোফায়েল মাহমুদ তুফান ও নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বাহার।
জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশি একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতিমধ্যে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সাব কমিটি গঠনে কয়েকটি মিটিং-এ নিজেদের ক্ষমতা অটুট রাখতে, সম্মেলনের দিন মঞ্চের সামনে ও মাঠ দখলে রাখতে এখন থেকে দু’গ্রল্পই তৎপর।
এ বিষয়ে যদি পদক্ষেপ নেওয়া না যায় তাহলে মারামারি সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় সংসদের হুইপ, জেলা আ’লীগ সভাপতি গ্রুপ এবং জেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের বলয়ের মধ্যেই কমিটি গঠন হবে বলে তারা মনে করেন।
সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মীনা মরফিদুল হক শিল্পী বলেন, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর দলে অনেকটা চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণ ফিরেএসেছে। তবে সম্মেলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে দু’পক্ষের সংঘাতের আশংকা রয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হয়। তিনি আরও বলেন, যারা রাজপথে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছে, দলকে শক্তিশালী করেছে তারাই যেন নেতৃত্বে আসে।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সাবেক সফল সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, দীর্ঘকাল যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ায় যুবলীগ সংগঠনের কার্যক্রম অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। আশা ছিল একটু সময় নিয়ে একটি জমজমাট সম্মেলন হবে। উপজেলা নির্বাচনের পর পরই যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে। নির্বাচনে হারজিত রয়েছে। আবার সবাই দলের লোক। ফলে সম্মেলনে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
স্বল্প সময়ের নোটিশে সম্মেলন অনেকটা এলোমেলোভাবে হচ্ছে। যুবলীগে তার বলয় বা গ্রুপিং-এর বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলবো না, তবে শুধু গ্রুপিং করলেই হবে না। যারা ১৫-২০ বছর ধরে যুবলীগ করেছেন, যারা মাঠে দলের দুর্দিনে ছিলেন এবং আছেন এসব পরীক্ষীত নেতাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি করতে হবে। নড়াইলের এক সময়কার শক্তিশালী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সর্বশেষ জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালের ১৮ অক্টোবর। এর ১০ বছর পর ২০০৫ সালের ৩ মার্চ কেন্দ্র ঘোষিত আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়।
এ কমিটি ১৩ বছর চলার পর ২০১৮ সালের 8 মার্চ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও ৩জনকে যুগ্ম-আহব্বয়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন শেষে জেলা যুবলীগের সম্মেলনের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা আর হয়নি।
২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে জেলা যুবলীগের আহবায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে অব্যাহতি দেয়া হলেও ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কমিটি বাকিরা বহাল রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের সুলতান মঞ্চে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
এ ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খাঁন নিখিল, জাতীয় সংসদের হুইপ নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নড়াইল জেলা সাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস ও সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলুসহ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।