নড়াইল শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার বেপড়েয়া ইজিবাইক। সকাল ৯টা থেকে প্রায় ১টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অসহনীয় জানজটের সৃষ্টিতে ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে শহরের মধ্যে যাত্রীবাহী বাস পার্কিং করে কয়েকটি র“টের বাস ছাড়ায় এ যানজট আরও ভোগান্তি বাড়েচ্ছে। শহরে বাস পার্কিং ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন সময় ইজিবাইক ও বাস মালিক সিমিতির সাথে প্রশাসন ও নড়াইল পৌরসভার বৈঠক এবং বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,নড়াইল পৌরসভায় তালিকাভূক্ত ১ হাজার ইজিবাইক নড়াইল শহরের মধ্যে চলাচল করলেও এর দ্বিগুণের বেশী ইজিবাইক চলাচল করছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারি চালিত ইজিভ্যান ও স্যালো ইঞ্জিন চালিত নসিমন-করিমন-ট্রলি। নড়াইল পৌরসভার পক্ষ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি ৫শ’ ইজিবাইক একদিন বাকি ৫শ’ পরেরদিন চালানোর নিয়ম করলেও ইজিবাইক মালিকরা তা মানেনি।
এদিকে শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে নড়াইল-যশোর সড়কে মৎস অফিসের পার্শ্বে ২০০৩ সালে প্রায় ২ একরের জায়গার ওপর বাস টার্মিনাল চালু হলেও তা কার্যকরী হয়নি। এটির চালুর পর ৬মাসের মাথায় বাস মালিক সমিতির অযুহাত ছিল শহর থেকে টার্মিনাল একটু দূরে হওয়ায় এখানে যাত্রী যেতে চায় না। ২০১৩ সাল থেকে বাস টার্মিনালের প্রবেশ মূখে একটি গর্তে পৌর এলাকার নিত্য দিনের ময়লা ফেলা শুর“ হলে বাস মালিক সমিতি বলা শুর“ করলো দূর্গদ্ধে তারা সেখানে টিকতে পারেন না।
এরপরের অযুহাত বাস টার্মিনাল জরাজীর্ণ ও ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী। পরের অযুহাত টার্মিনালের সাথে প্রত্যেক র“টে বাইপাস সড়ক না থাকায় তারা এটি ব্যবহার করেন না। সর্বশেষ অযুহাত টার্মিনালের জায়গা কম হওয়ায় তারা টার্মিনাল ব্যবহার করছেন না। বর্তমানে শহরের মধ্য থেকে নড়াইল-মাইজপাড়া, নড়াইল-মাগুরা, নড়াইল-যশোর ও নড়াইল-সিকিরহাট র“টের বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে নড়াইল-যশোর র“টের বাস চালক সোয়েব মিয়া বলেন, বাস টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল করা উচিত। তবে কেন টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া হয়না তা বলতে পারবেন না। এটা মালিক-মহাজনদের বিষয়।
পত্রিকা বিক্রেতা স্বপন কুন্ডু বলেন, ইজিবাইক চালকরা কোনো নিয়মনীতি মানে না। তারা ই”ছা মতো ইজিবাইক চালায়। ফলে দূর্ঘটনা যেমন বাড়ছে তেমনি যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পৌরসভার তালিকাভ’ক্ত ইজিবাইক চালক বাবুল ফকির ও সোহেল শেখ বলেন, বাইরের ইজিবাইকের জন্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
নড়াইল ইজিবাইক সমিতির নেতা গুর“চাঁদ কুন্ডু বলেন, পৌরসভার তালিকাভূক্ত ১ হাজার ইজিবাইক রয়েছে। এর বাইরে আরও প্রায় ২ হাজার ইজিবাইক শহরে চলাচল করে। এসব ইজিবাইক শহরে যানজটের সৃষ্টি করছে।
পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, নিয়ন্ত্রনহীনভাবে চলছে ইজিবাইক। এছাড়া শহরের মধ্যদিয়ে চলছে যাত্রীবাহী বাস। শহরের মধ্যে ১৪টির বেশী স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়ছে এবং মাঝে মধ্যে দূর্ঘটনা ঘটছে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, বাস মালিক সমিতি ও ইজিবাইক সমিতির যৌথ উদ্যোগে বিষয়টির ফয়সালা করা উচিত বলে মনে করি।
এ বিষয়ে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর সরদার বলেন,বর্তমানে বাস টার্মিনালে ৮-১০টি বাস প্রবেশ করলে আর জায়গা থাকে না। সে কারণে বাসগুলো টার্মিনাল ব্যবহার করছে না। এখন নতুন বাস টার্মিনাল করা দরকার অথবা বর্তমান টার্মিনালের পাশে জায়গা অধিগ্রহন করে টার্মিনালের পরিধি বাড়ানো উচিত।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা বলেন, দীর্ঘ বছরের অববহৃত বাস টার্মিনালটি গত ৬ মাস আগে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে ১ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ভবন ও রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এখন এখানে কমপক্ষে ৫০টি বাস পার্কিং করতে পারবে। এখন নানা অযুহাতে টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া হ”েছ না। টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসসসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিকবার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।
পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, টার্মিনাল থাকা সত্তে¡ও শহরের মধ্য দিয়ে যাত্রীবাহী বাস চলাচল,প্রকাশ্যে টোল আদায় অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। এছাড়া পৌরসভার তালিকাভূক্ত ইজিবাইকই শহরের মধ্য দিয়ে চলাচলের কথা।আমরা এসবের বির“দ্ধে ব্যব¯’া নেব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, ইজিবাইক চলাচলের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা রয়েছে। পৌরসভার তালিকাভূক্ত ইজিবাইক ছাড়া বাইরের বা কোনো ইউনিয়নের ইজিবাইক শহরের মধ্যে প্রবেশ করার কথা নয়। এছাড়া শহরের মধ্য দিয়ে বাস চলাচলের বিষয়টি তার নলেজে নেই। ইজিবাইক ও বাস চলাচলের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।