নড়াইলে অত্যাচার ও লুট আতংক কাটছে না সংখ্যালঘুদের কমিউনিটি সেন্টার ভাঙচুর ও লুট 

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 3 months ago

নিজস্ব প্রতিবেদক, নড়াইল:

দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর নড়াইলে সংখ্যালঘুদের পর অত্যাচার ও লুটের ঘটনা ঘটেছে।

গত সোমবার (৫ আগস্ট) দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর দুপুর থেকে এই ভাবে হিন্দুদের পর অত্যাচার ও লুটপাট করে যাচ্ছেন দুর্বৃত্তরা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সংখ্যালঘুদের পরিবার।

জানা গেছে,দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর নড়াইল- ঢাকা মহাসড়কের মাছিমদিয়ায় অবস্থিত নড়াইল শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অলোক কুন্ডুর পালকি কমিউনিটি সেন্টার এন্ড গেস্ট হাউসে ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কমিউনিটি সেন্টারে থাকা ১ কোটি টাকার মালামাল লুট করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে পোলট্রি ব্যবসায়ী বাটুল মজুমদারের বাড়িতে কয়েক দুবৃত্ত প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইলে নিয়ে যায়। এর আগে সোমবার বিকেলে আন্দোলনকারীরা তার বাড়ি ভাংচুর করে। সোমবার রাতেই সদরের শেখাটি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শুভ বিশ্বাসের বাড়ি ৫০-৬০ জনের দুবৃত্ত ঢুকে বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং তাকে,তার অন্তস্বত্তা স্ত্রী ও বাবা-মাকে মারধর করে নগদ ৫৬ হাজার টাকা ২ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে শহরের কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ী মানিক ভদ্রর ভাংচুর করে দু’টি এয়ারকন্ডিশনার ও গেট।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে কালিয়া থানার সালামাবাদ ইউনিয়নের জোকা গ্রামে একদল দুবৃত্ত ডাকাতির চেষ্টা করলে গ্রামবাসীর প্রতিহত করায় তারা ফিরে যায়। এর আগের দিন বুধবার রাতে কালিয়া পৌরসভার মির্জাপুর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী শংকর বিশ্বাসের বাড়িতে দুবুত্তরা প্রবেশ করে শংকর বিশ্বাস ও তার মাকে মারধর করে নগদ ২ লাখ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। এ সময় দৃবৃত্তরা জানতে চায় তোর বৌ কোথায় ? মঙ্গলবার কালিয়ার কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের চালনা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী স্বজন বিশ্বাসের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে। বুধবার বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের রায় গ্রামের বাসিন্দা ওয়ার্কার্স পাটির কর্মী ব্যবসায়ী অখিল বিশ্বাসের বাড়িতে একদল দুবৃত্ত প্রবেশ করে তার কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়।

নড়াইল শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অলোক কুন্ডু বলেন,‘আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খায়। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর আমার পালকি কমিউনিটি সেন্টার এন্ড গেস্ট হাউসে থাকা ২ টনের এসি ২০ টা,তিনটা ফ্রিজ,নিচে থাকা কফি মেশিন একটি,চেয়ার ৫শ’ পিস,টেবিল ৩০ টি,বিভিন্ন বেডে থাকা ২৪ ইঞ্চি এলইডি মনিটর টিভি ১৩ টি,সিসি ক্যামেরা ৩০ টি,সিলিং ফ্যান ৯০ টি,প্রজেক্টর ও তার পর্দা,কম্পিউটার সেটাপ একটা, এলইডি টিউব লাইট ১শ’৫০ টি,আইপিএস দুইটি ব্যাটারিসহ,তিনটি মটর,গোডাউনে থাকা বিশ লক্ষ টাকার কীটনাশক ওষুধ,স্টিলের আলমারি একটি,কাঠের আলমারি ১৩ টি,বেডরুমে থাকা ১৩ টি বক্স খাট,২৫টি সুপা সেট,রান্না করার বড় ডেগ ২৯ টি,বড় কড়াই ২ টি,পেলেট  ৫শ’ পিস,গেলাস ৫শ’ টি, চামচ ৩শ’ টি,বড় গামলা ৩০ টি,রাইসটেরে ৫০ পিস, স্টিলের গামলা ৩০ পিস,পানির জগ ৩০ টি,এবং পাশের বিল্ডিং নির্মাণ কাজের জন্য এনে রাখা ২শ’বস্তা সিমেন্ট, ও ১৬ মিলি রড ৩ টন ও আমার ঘের থেকে সাদা মাছ প্রায় ৫০ মণ মাছ লুট ও পালকি কমিউনিটি সেন্টার ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় আমার ১ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে য়ায় দুর্বৃত্তরা। এখন আমিসহ আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহমুদুল হাসান সনি জানান,নড়াইল শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অলোক কুন্ডুর পালকি কমিউনিটি সেন্টার ও গেস্ট হাউসে থাকা বিভিন্ন মালা মাল লুট করে নেন দুর্বৃত্তরা। রবিবার সকালে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন জায়গা থেকে লুট হওয়া কিছু মালামাল উদ্ধার করে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের এই অভিযান অব্যাহত আছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা জেলার প্রতিটা মন্দিরে পাহারা বসিয়েছি। এছাড়া হিন্দু পরিবারের পর যেন অত্যাচার ও তাদের বাড়ি ঘর লুট না হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের নেতাকর্মী একটিভ আছে। তাছাড়া কিছু লুটকারি বাহিনী আছে এই সুযোগে তারা এসব করে বেড়াচ্ছে। তাদের আমরা চিহ্নিত করে বের করার চেষ্টা করতেছি।

এ বিষয়ে নড়াইল জেলা হিন্দু বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের এক ব্যক্তি বলেন, ভাংটুর,লুটপাট ও ডাকাতির পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলে এখন হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। যেমন-পিকনিক ও ধারের কথা বলে একটি গ্রæপ চাঁদা দাবি করছে। অনেকের কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। আবার স্থানীয় একটি গ্রæপ হিন্দু স¤প্রদায়ের অনেককে তাদের সাথে দেখা করতে নির্দেশ করছে।
এদিকে নড়াইলে সংখ্যালঘুদের পর অত্যাচার ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার (১২ আগস্ট) ‘প্রতিবাদ সমাবেশ’ ডেকেছে নড়াইল জেলার সনাতনী শিক্ষার্থী ও জাগ্রত সনাতন সমাজ।

এ বিষয়ে নড়াইলের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পুলিশ সুপার মোহাঃ মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘শুক্রবার বিকেল থেকে পুলিশের টহল শুরু হয়েছে। গত ২-৩ দিনে বিভিন্ন কোথাও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা বা চাঁদাবাজির বিষয়টি জানা নেই। জানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

error: Content is protected !!