দেশে বেকারত্ব কমাতে ক্ষুদ্রশিল্প ইট ভাটা উন্নততর প্রযুক্তিতে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি

লেখক: মুহা: মোশাররফ হোসেন
প্রকাশ: 5 days ago

মুহা. মোশাররফ হোসেন:

সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার যুগান্তকারী সফল ও সার্থক গণঅভ্যুত্থানের অনুপম ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে স্বল্প সময়ের জন্য আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কিছুটা অসংগতি বিরাজ থাকলেও বর্তমানে বহুলাংশেই তা নিয়ন্ত্রিত।

এই সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যবিহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। কোনো বিভাজনে দেশ নয়, বরং সমতার ভিত্তিতে সকল নাগরিকের অধিকার-নিরাপত্তা ও সামগ্রিক কল্যাণ সাধনই বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার।তাই এই নতুন সম্প্রীতির বন্ধনের বাংলাদেশে ইট ভাটা নিয়ে ভাটা মালিকরা হতাশা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ইট ভাটা বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্পের একটি প্রতিষ্ঠান।

এদেশে প্রায় ৮ হাজার ইট ভাটা আছে। এর মধ্যে বর্তমান অর্ধেকের বেশি আছে পরিবেশে ছাড়পত্র বিহীন। যাদের কোন ছাড়পত্র নেই। এখানে কর্ম করে প্রতি ভাটায় প্রায় আড়াই’শো শ্রমিক। যারা হতদরিদ্র কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সামাজিক অবস্থা একেবারে দুর্বল। এরা অনেকটাই নির্ভরশীল এই ইটভাটা শিল্পের উপর। তাদের জীবন জীবিকা অর্জন করে এই ইট ভাটায় কাজ করে। পাশাপাশি এসব ইট ভাটা থেকে প্রতিবছর অনেক টাকা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। যা, দিয়ে সরকার দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করে থাকে সরকার।

এই ইটভাটায় পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরেছে অনেকেরই। বাংলাদেশের বেকারত্বের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উন্নায়নের কাজেও ব্যাপক ভুমিকা রাখে। অথচ এই ইট ভাটা মালিকরা তাদের এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখন হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ এই ইট ভাটার উপরে কালো ছায়া নেমে এসেছে। দেখা দিয়েছে সরকারের তথা এক শ্রেণির আমলাদের কু-নজর। এতে মনে হচ্ছে চরম দুর্দিনে নামিয়ে আনা চেষ্টা চলছে। যদি এমনটা করার পরিকল্পনা থাকে তাহলে কয়েক লক্ষ শ্রমজীবী ঘোর অন্ধকারে অতিবাহিত করতে হবে জীবন-জীবিকা নিয়ে। এছাড়া মালিকরা পড়বে বিপাকে।

এই ইট ভাটা যখন স্থাপনা করেছিল মালিকরা, তখন পরিবেশে অনুমতি নিয়েই স্থাপনা করেছিল। পরিবর্তীতে শ্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার এটা পরিবেশ দূষণ বলে তালবাহানা করে পরিবেশের ছাড়পত্র না দেওয়ার বিধিনিষেধ করে। এতে করে কিছু ইট ভাটার ছাড়পত্র পায় আর কিছু ইট ভাটা ছাড়পত্র না পেয়েও বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে ভাটা চালায়। ভাটা মালিকরা মনে করেছিল সরকার পরিবর্তন হলে হয়তো পরিবেশের আইন শীতিল হয়ে নতুন করে আশার আলো দেখবে। মালিক শ্রমিকের ভাগ্যের কিছুটা উন্নতি হবে।

৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার পর পরই আবার এই অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজাওয়ানা হাসান এই ভাটা নিয়েই সেই বিধি নিষেধাজ্ঞা উপর জোরদার করেছেন।
এমনকি এই ইটের ভাটাই চলবেনা বলেই ঘোষণা দেন। মনে হচ্ছে এদেশে কোন নিয়মনীতির বালাই বলতে নেই। যে যখন আসছে তার মত করে করছে! কারোর তোয়াক্কা না করেই নিয়ম করছে। একবারও ভাবছেনা যে ভাটার যখন কার্যক্রম শুরু করেছিল তারা অনুমতি নিয়েই করেছিল। আর এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করতে গেলে তাদের একটা যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিৎ। এই ভাটা থেকে অনেক বেকার লোক কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের কি হবে? এমনিতেই কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, বিনিয়োগে খরা, বাড়তি মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক চাহিদায় ধসের কারণে কর্মসংস্থান কমেছে। এই ইট ভাটার হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ যাবে কোথায়.? সাথে এই ভাটা মালিকরা কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করে বসে আছে তাদেরও কি উপায় হবে? শুধু এই নয়, এই ভাটা থেকে বেকারত্ব দুরের পাশাপাশি সরকারের কোষাগারে যে অর্থ যায় সেটার কি হবে? বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটা গরীব দেশ, যেখানে উন্নয়ন যেমন তেমন আরও উন্নায়নের যাত্রা কিভাবে বন্ধ হবে সেই দিকে সিদ্ধান্তে অটল। বিশ্বের যেকোনো দেশে বৈধ একটা শিল্প কারখানা অবৈধ ঘোষণা করে বন্ধ করতে গেলে আগে তার ক্ষতি পুরণ দিয়ে তারপরে বন্ধ করে। আমরা এমন একটা দেশে বসবাস করি যে দেশে এমন ভাবনা কেউ ভাবেনা। একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে গেলে অনেক ইনভেস্ট করতে হয়। সেই টাকা কিভাবে প্রতিষ্ঠানের মালিক একত্রিত করে কাছে আনবে?

এ ছাড়াও ঐ প্রতিষ্ঠানে অনেক শ্রমিক কর্ম করে বেকারত্ব দূর করে তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়, এই শ্রমিক কর্মচারীরা কোথায় যাবে? আর তারা কিভাবে বেঁচে থাকবে? বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটা গরীব দেশ, সেই দেশে উন্নায়নের ধারাবাহিক বজায় রাখতে এসব শিল্প কলকারখানা প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই প্রয়োজন। এদেশে বাহিরের দেশেরা বিভিন্ন এনজিওয়ের মাধ্যমে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে অথচ সেই দেশে নিজস্ব দেশের মালিকদের ব্যবসা করে উন্নতি করার সহযোগিতা করার পরিবর্তে দেউলিয়া করে দেওয়ার পায়তারা চলছে। এটা খুব দুঃখজনক আর ভাবতেও খারাপ লাগে। এভাবে সরকার খেয়াল খুশিমত আইন করে ইট ভাটার মত একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে এদেশের প্রতি দেশের জনগণের অন্য ব্যবসা করার প্রতি আস্থা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে এবং উন্নয়নের ধারা ব্যহত হবে।

সরকার জনগণের বন্ধু, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস একজন জ্ঞাণী ও বিছুক্ষণ ব্যক্তি, আশা করি তিনি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে ইট ভাটার মত একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে অত্যাধুনিক উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব করে আবার পুনারয় সকল ইট ভাটাকে পরিবেশের ছাড়পত্র দিয়ে পুনর্জীবিত করে এই ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠান জেগে তোলার সহযোগিতা করবেন। ইহাতে ইট ভাটার মালিকরা বেঁচে থাকবে সাথে দেশে বেকারত্বের হার কমবে এবং এই ভাটা থেকে যে টাকা সরকারি খাতে আসবে সেই টাকা দিয়ে এদেশের উন্নয়নের কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

ইট ভাটার মত একটা ক্ষুদ্রশিল্প বন্ধ না করে, উন্নততর কম দূষণকারী ও আধুনিক প্রযুক্তিতে ইট প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করার মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব করে পুনারয় সকল ইট ভাটাকে, পরিবেশের ছাড়পত্র দিয়ে পুনর্জীবিত করার জন্য এই অন্তর্বর্তী সকারকে জোর দাবি ইট ভাটা বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্পের মালিক শ্রমিকের। নহে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। যা কাটিয়ে উঠতে দেশে বিকল্প বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট ও প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ।

error: Content is protected !!