মুন্না ইসলাম আগুন দুর্গাপুর প্রতিনিধিঃ
১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে । রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলা জয়নগর ইউনিয়নের গগনবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত বধ্যভূমিতে সকাল ১০ ঘটিকায় দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সাবরিনা শারমিন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, এই সময় তাঁর সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী,থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ দুরুল হোদা সহ সকল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ।
এই সময় আরও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র জনাব সাইদুর রহমান মুন্টু। উপজেলা ও পৌর বিএনপির পক্ষে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নাল, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোঃ জোবায়েদ হোসেন সহ অনেকেই।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সাবরিনা শারমিন, দুর্গাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ দুরুল হোদা,জেলা বিএনপির সদস্য জননেতা জনাব মোঃ সাইদুর রহমান মন্টু, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোঃ জোবায়েদ হোসেন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক হাছানুজ্জামান লাল্টু , ৩নং পানানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিন ,রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর বুলেট সহ অনেকেই।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।
একাত্তরে ৩০ লাখ লোক শহীদ হন। তাদের মধ্যে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ জ্যোতি রায় গুহ ঠাকুর,তাঁর সহ ধর্মিনী বাসন্তী গুহঠাকুর তাঁর একটি গ্রন্থে লিখেছেন, ‘নীল নকশার রেখা অংকন শুরু হয়েছিল একাত্তরের পহেলা মার্চের আগেই সত্তরের ১৭ ডিসেম্বর গণভোট বা তারো অনেক আগে উনসত্তরের গণ আন্দোলনের সময় থেকেই, কিংবা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পরে। একাত্তরে তারা পরিকল্পনা করে যুদ্ধে নামে। যুদ্ধতো নয়, কেবল নিরস্ত্র মানুষ নিধন। প্রথমে ওদের এলোপাতাড়ি মারা, তারপর শহরে, গ্রামেগঞ্জে বেছে বেছে ধনী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী নিধণ করে নদীতে খালে ফেলে দেওয়া। অনেকে মনে করেন চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে—তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” ঘোষণা করেন।