মোঃ রাজু রংপুর বিভাগী প্রতিনিধি :
হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত দেশের উত্তরের জেলা গুলির মধ্যে ঠাকুরগাঁও অন্যতম। হিমালয়ের খুব কাছে হওয়ায় এ অঞ্চলে শীত যেমন বেশি তেমনি আবহাওয়া অনুক’ল হওয়ায় অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে সব ধরনের ফসল ও সবজির চাষও হয় বেশি।
দেশের কৃষি প্রধান ও কৃষিতে স্বনির্ভর জেলা গুলির মধ্যে এ জেলা বরাবরই তালিকার শীর্ষে থাকে। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। শীতের তীব্রতায় ধরাশায়ী এবারের ফসলের খেত। তাপমাত্রার পারদ যতই নিচে নামছে, কৃষকরা ততই দুশ্চিন্তায় পড়ছেন খেতের আলু, ভুট্টা আর সবজি নিয়ে। টানা দু সপ্তাহ ধরে এখানকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৭ এবং ৯ ডিগ্রির মাঝেই থমকে রয়েছে বলে এ অবস্থা তৈরী হয়েছে।
যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, তেমন কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কনকনে ঠান্ডায় কোল্ড ইনজুরিতে নষ্ট হতে বসেছে বোরো ধানের বীজতলা। শীতের প্রকোপ থেকে বীজতলা রক্ষায় কেউ কেউ পলিথিন ও খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছে। এতেও যথেষ্ট নয় বলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। অনেকে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছে।
বৈরী আবহাওয়া চলতে থাকলে চারা সংকটসহ অপরিপক্ব চারায় ব্যাহত হতে পারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। তবে সমস্যা সমাধানে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, দাবি কৃষি বিভাগের। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা গড়েয়া এলাকার কৃষক এমদাদুল জানান, বীজতলার চারা হলুদ ও ফ্যাকাসে রং ধারণ করেছে এবং কিছু কিছু চারাগাছ শীতের প্রকোপে মারা গেছে। এখন কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
বীজতলা রক্ষায় গ্রাম পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে উপকার হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তার দেখা না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। নারগুণ কহরপাড়া এলাকার কৃষক আলম মিঞা জানান, শীতের কারণে বীজতলায় চারা রক্ষায় বাড়তি প্লাস্টিক ক্রয়ের খরচ যোগ হয়েছে। ফলন ভালো না হলে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ উঠাতে হিমশিম খেতে হবে।
কুজিশহর এলাকার কৃষক আব্দুল বাসেদ জানান, শীত থেকে চারা রক্ষার জন্য পলিথিন ও খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছেন। কিন্তু তার পরও অনেক চারায় পচন ধরেছে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও চারা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন। যা গত বছরে ছিল ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে এরই মধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে বেশ কিছু এলাকায় সামান্য কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও সেটি বড় সমস্যা নয়। জেলার কৃষকরা পলেথিন দিয়ে ঢেকে বীজতলা রক্ষা করছে এটা বেশ কাজে দেবে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মতো বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।