মোঃ রাজু রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক ও ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকিকে অন্যায়ভাবে থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে হাতে হাতকড়া পরিয়ে এবং চোখে কাপড় বেধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা ও যুবলীগের আসাদুজ্জামান পুলকের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এই নেতা। ওসি বলছেন, তাদের ছেড়ে না দেওয়ায় তারা এমন নিত্যান্ত মিথ্যা অভিযোগ করছেন। শুক্রবার (৫ মে) রাত ৯ টায় ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান পুলক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল রাত সোয়া ৯ টার দিকে আমাকে এলাকার এক বড় ভাই কল দিয়ে বলে যে, পাবলিক ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় পুলিশের সাথে রকির সাথে ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে।
বিষয়টি দেখার জন্য আমাকে যেতে বলে। তাদের কথায় ও মেলাটি আমার বাড়ির পাশেই হওয়ায় আমি তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখি যে রকিকে পুলিশ টানাহেচড়া করে গাড়িতে তুলছে। আমি এলাকার বড়ভাই হিসেবে ওসির কাছে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি অজথায় উত্তেজিত হন ও আরও পুলিশ ডাকেন। পরিস্থিতি যখন খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন এলাকার ছোট ভাইরা আমাকে সরে যেতে বলেল, আমি আমার মোটরসাইকেল স্টার্ট করি। এসময় আমার গাড়ি থেকে চাবিটি খুলে নেয় তারা। চাবিটি চাইলে না দিলে আমি সেখান থেকে একটু দুরে সরে আসি। একটু পরেই তার লোকজন এসে আমার কমোর ধরে আমার কথা না শুনে বিনা অপরাধে আমাকে পিকআপে তুলে থানায় নিয়ে যায়।, পুলক বলেন, ‘পরে আমাকে তুলে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ওসি। সেই ভাষা গুলো আমি প্রকাশ করতে পারছি না। গালিগালাজের এক পর্যায়ে আমার চোখে গামছা বেধে ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে লাঠিদিয়ে মারধর করতে থাকে। এভাবে একটি লাঠি ভেঙ্গে ফেলার পরেও অন্য লাঠি দিয়ে ওসি ও তার সহযোগি পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে প্রহার করতে থাকেন।
‘আমি নাগরিক ও মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছি। কারণ ভাঙ্গা হাত নিয়েই আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে । পুলকের মা আফরোজা বেগম বলেন, ‘ওসি এই থানায় যোগদানের মাত্র ৭ মাস হয়েছে। তারা আমার ছেলের সাথে যা করলো তা ঠাকুরগাঁওবাসীর জন্য লজ্জাজনক। আমার যে সামাজিক, শারীরিক ও মানষিকভাবে হেনস্তার শীকার হইলাম তার জন্য এর সঠিক বিচার চাই। যদি বিচার না হয় তাহলে আজকে আমার ছেলের সাথে এমন হয়েছে পরবর্তীতে আরও অন্য মায়ের সন্তানের সাথেও এমন হতে পারে। তাই আমরা এর সঠিক বিচার চাই।, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, তার ছেলে সুস্থ হলে সঠিক বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন তারা। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নাসরুল ইসলাম বলেন, ‘আসাদুজ্জামান পুলক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ক্যাবিনে ফিজিক্যাল এ্যাসালড রোগী হিসেবে ভর্তি আছেন। তার বাম হাতের একটি হাড় ভেঙ্গে গেছে।
তাকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।, এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, সেদিন রাতে আমাদের কাছে ফোন আসে কতিপয় ছেলেপেলে মদ্যপান করে এসে বৈশাখী মেলায় মহিলাদের সাথে অশ্লীর আচরণ করছে। এমন খবরের প্রেক্ষিতে সেখানে পুলিশ পাঠানো হলে দুস্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। পথিমধ্যে মেলা কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় রকি নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। এসময় উপস্থিত জনতা রকিকে কিলঘুষি মেরে পুলিশে তুলে দিলে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে পালিয়ে যাওয়া আরেকজনকে ডিসি পার্কের সামনে থেকে জনগণ ও পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়। সে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পরে গিয়ে আহত হন। তাই সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করি।
পর দিন তাকে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪১ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করি।, পুলককে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্যাতন করে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগটি নিত্যান্তই মিথ্যা। কারণ তারা চেয়েছিল আসামীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। আমরা যখন দেখি থানায় পুলকের নামে ৫টি ও রকির নামে ৯টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মানুষকে জিম্মি করে জোরপূর্বক চাদা আদায় ও পুলিশকে মারধরের একাধিক মামলা রয়েছে থানায়। এদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আব্দুল মজিদ আপেল জানান, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচারের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে পুলিশ সুপার ও রংপুরের ডিআইজিকে জানানো হয়েছে।