আহমেদ হানিফ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ,রিভার ক্লাব ও গ্রীন ভয়েসের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে নদী সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার।আজ(সোমবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে ‘আমাদের জনজীবনে নৌপথ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইমাম হাসান সৈকত ও নওশীন তাসনিম নিঝুম এর সঞ্চালনায় এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড.মো.মনজুরুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।উক্ত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর বেনু কুমার দে,উপ-উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবির বিন আনোয়ার,সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া,সভাপতি প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
এতে আরো অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম, ডিন মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিসারিজ অনুষদ,প্রফেসর ড.অলক পাল,ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ,প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন,ইন্সটিটিউট অব ফরেস্টি এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স,প্রফেসর ড. মো. ইকবাল সারোয়ার, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ,শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ,জেলা মৎস্য কর্মকতা,এএফএম নেজাম উদ্দিন,এসপি নৌ পুলিশ,প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান,সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি,স্থপতি মিজানুর রহমান, প্রতিষ্ঠতা গ্লীন প্লানেট,চৌধুরী ফরিদ,সমন্বয় প্রকৃতি ও জীবন,মোহাম্মদ আলী,সাধারণ সম্পাদক হালদা নদী রক্ষা কমিটি।সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে প্রভাষক শামসিল আরেফিন বলেন, বাংলাদেশের আদালতে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।এই জীবন্ত সত্তা খালে পরিণত হওয়ার আগেই আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন কালে প্রানিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কিবরীয়া বলেন, হালদা বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র, যা শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একক নদী হিসেবে সর্বোচ্চ অবদান রেখে আসছে এই হালদা নদী। এরকারনেই হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ” এছাড়াও তিনি হালদা নদী সংরক্ষনে আইডিএফ, পিকেএসএফ, নৌ পুলিশ, হালদা নদী রিসার্চ ল্যাবরেটরি এবং ২০১৬ সাল থেকে নদী ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেন।মূখ্য আলোচক কবির বিন আনোয়ার তার বক্তব্যে বলেন শিক্ষার্থীদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে হবে,জানতে হবে কিভাবে স্মার্ট উপায়ে নদী রক্ষা করা যাবে।আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে রক্ষা পাবে নদী দূষণসহ নানা অনিয়ম।বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক নদী সংশ্লিষ্ট কাজে।তিনি আরো বলেন হালদা নদী রক্ষার ক্ষেত্রে সরকার বদ্ধপরিকর যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবেন।আলোচনাকালে প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হালদাকে দূষণ থেকে রক্ষা করার মধ্যমেই আমরা চাইলেই অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ মতো হালদাকে রক্ষা করতে পারি। শুধু সচেতনতাই না, আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে পারলেই এগিয়ে যাবে দেশ।চৌধুরী ফরিদ বলেন,কর্ণফুলী নদীর গভীরতা আগে ছিল ৯০০ মিটারের বেশি যা বর্তমানে ৪৫০ মিটারে নেমে এসেছে। নদীর তলদেশে ১৮-২০ ফুট ঢেকে গিয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর দূষণের কারণে। সকল নদী ও প্রকৃতি রক্ষা করার মধ্যমেই আমরা আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত নদী,নগর ও দেশ উপহার দিতে পারবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর বেনু কুমার দে বলেন, শিক্ষার্থীদের নদী বান্ধব হতে হবে, নদী রক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভূমিকাই পারবে আগামীতে সুন্দর ও স্বচ্ছ ধারার নদীর প্রবহমান চিত্র বজায় রাখতে।সেমিনারে আয়োজকদের মধ্য থেকে ক্লাব পরিচিতি, কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেন গ্রীন ভয়েস এর সাধারণ সম্পাদক মোস্তাঈন বিল্লাহ ও রিভার ক্লাবের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল আশেক।সেমিনারে অন্যান্য অতিথিবৃন্দরাও আলোচনা করেন,অতিথিদের আলোচনায় নদী সচেতনতার নানা দিকগুলো উঠে আসে,তাদের বক্তব্যে উপস্থাপন করেছেন সকলের সম্বলিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নদীকে রক্ষা করতে পারবো,আমরা প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলতে পারবো তার স্বীয় রূপ-লাবণ্যে।তাই আমাদের উচিত যার যার অবস্থান থেকে নদী রক্ষায় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করা।সেমিনারের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে ও সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনার সমাপ্ত হয়েছে।
সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় লাইব্রেরি চত্বরের সামনের রাস্তায় নদী সচেতনতামূলক প্লেকার্ড সম্বলিত র্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।উল্লেখ ১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। নদীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং বাংলাদেশের নদী গুলোর সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশেও পালিত হয় বিশ্ব নদী দিবস। বিশ্ব নদী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য নদী সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই নদীগুলোর উপকারিতা এবং নদীগুলো দূষণের ফলে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে তা সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই এ বিষয়ে সরকারের আরো গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং আমাদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে।