কেশবপুরে উপড়ে পড়েছে মধু কবির স্মৃতি বিজড়িত “কাঠ বাদাম” গাছটি

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 2 months ago

ইমরান হোসেন, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:
যশোরের কেশবপুর উপজেলার ২নং সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের জমিদার বাড়ির দক্ষিণ পাশে কপোতাক্ষ নদের তীরে মহাকবি মাইকেল মধূসুদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত “কাঠ বাদাম” গাছটি গত রবিবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রচন্ড বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে উপড়ে পড়েছে।
ধারণা করা হয় মৃত প্রায় ৩০৯ বছর বয়সি ইতিহাসের স্বাক্ষবহনকারী ওই “কাঠবাদাম” গাছটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কপোতাক্ষ নদের তীরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত এ কাঠবাদাম
গাছের নিচে বসে কবি ছোটবেলায় কবিতা রচনা করতেন।
সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগের মধ্যে সব থেকে বেশি বয়স্ক কাঠবাদাম গাছ এটি। এ কাঠবাদাম তলায় কবি শৈশবে কবিতা লেখা ছাড়াও ১৪ দিন অবস্থান করেছিলেন। এ কারণে জায়গাটি কাঠবাদাম ঘাট নামে পরিচিত।
‘উল্লেখ্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরিবারের লোকজন কাঠবাদামতলা ঘাটে স্নান করতেন। মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সি মধুসূদন দত্তকে তার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত শিক্ষাদানের জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। কবি মধুসূদন দত্ত তার পিতার ইচ্ছায় ১৮৩২ খ্রি. কলকাতা গমন করেন। সেখানে কবি খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার পর বজরায় করে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে কাঠবাদামতলায় বজরা ভেড়ান।
ধর্ম ত্যাগের কারণে তার জমিদার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত কবিকে বাড়িতে উঠতে দেননি। এই কারণে কবি ১৪ দিন এই কাঠবাদাম গাছের নিচে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করেন।
১৪ দিন অবস্থান করার পরও তার পিতা যখন সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন তখন কবি কাঠবাদামতলা থেকে প্রায় ৪০০ গজ উত্তরে হেঁটে গিয়ে বজরায় উঠে কলকাতার উদ্দেশে পাড়ি দেন। এ কারণে ওই ঘাটটি ‘বিদায় ঘাট’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ‘বিদায় ঘাট’ কবিতাটি কপোতাক্ষ নদের তীরে শ্বেতপাথরে খোদাই করে স্মৃতিফলক করে রেখেছে কবির স্মৃতিরক্ষা আয়োজকরা।
২০২৪ খ্রিস্টাব্দে এসেও মহাকবির স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছ ও ‘বিদায় ঘাট’ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল।
মহাকবির স্মৃতি আঁকড়ে ধরে যুগ যুগ বেঁচে থাকা কাঠবাদাম গাছটি ও কবির স্মৃতি অম্লান করে রাখতে ১৯৪৪ সালে যশোর জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ কাঠবাদাম গাছের পোড়া ইট দিয়ে গেঁথে পস্নাস্টার করে দেয়। স্থানীয়রা জানান কাঠবাদাম গাছটি যত্নের অভাবে আজ একেবারেই গোঁড়া থেকে উপড়ে পড়েছে।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যদি কৃষি অধিদপ্তর বা বন বিভাগ কাঠবাদাম গাছের ইটের গাঁথনি খুলে গাছের গোড়া পরিচর্যা করেন তবেই গাছটি আরও কয়েক যুগ বেঁচে থাকতো। প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মোৎসব উপলক্ষে ‘মধু মেলা’র আলোচনায় অনেক আলোচক কাঠবাদাম গাছটি সংস্কারসহ রক্ষণাবেক্ষণের দাবি তোলেন।
আরো উল্লেখ থাকে যে, ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধু মেলার আলোচনা সভায় কবি ও সাংবাদিক হোসাইন নজরুল হক, কবি ও গবেষক সফিয়ার রহমান কাঠবাদাম গাছটি রক্ষণাবেক্ষণের জোরালো দাবি উপস্থাপন করেন।
তবে এর ফলপ্রসূ কতটুকু জানি না, শুধু এটুকু জ্ঞাত হয় যে, ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ অধিদপ্তরের এআইজি মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান মধুপল্লী ও কপোতাক্ষ নদের পাড় পরিদর্শনকালে কাঠবাদাম গাছটি মৃতপ্রায় দেখে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন এবং তারই নির্দেশে ২৭ অক্টোবর ২০২১ বিকেলে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দীন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক পিন্টু লাল দাসসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কবির স্মৃতিরক্ষার্থে আরও দুটি কাঠবাদাম গাছের চারা রোপণ করেন। এরপর ২ নভেম্বর দুপুরে গাছের চারা দু’টি পরিচর্যাও করেন এ পুলিশ কর্মকর্তারা। ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন রায় স্বাক্ষরিত ২০১৮ সালের ১০ জুন তারিখে কালজয়ী মহাকবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়ির পর্যটন দৃষ্টিনন্দন, কবির আধুনিক ভাস্কর্য, সমাধিলিপি প্রতিস্থাপন, অনশনরত স্থল, কাঠবাদাম গাছের শ্রীবৃদ্ধি ও বিখ্যাত কবিতা অবলম্বনে টেরাকোটা দিয়ে কাহিনী চিত্র, ওয়াল ও ওয়াস বক্স নির্মাণে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সমুদয় টাকা ফেরত যায় বলেও মন্তব্য পাওয়া যায়।
আবার সংস্কারের বরাদ্দসহ মহাকবির ভিটা-বাড়ি, বিদায় ঘাটসহ কবির স্মৃতিবিজড়িত কাঠবাদাম গাছ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা করে রাখার জোর দাবি এলাকাবাসী ও মধু ভক্তরা। কাঠবাদাম গাছটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে কোনভাবে সংরক্ষণ করা যায় কিনা
সে ব্যাপারে মুঠো ফোনের মাধ্যমে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ দেখায়।
error: Content is protected !!