কালীগঞ্জে ১১ মাস বয়সী মরিয়ম উচ্চতায় ২৭ ইঞ্চি প্রতিবন্ধী মায়ের সমান 

লেখক: Champa Biswas
প্রকাশ: 1 year ago

হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি :

শারীরিক প্রতিবন্ধী ২৭ ইঞ্চি উচ্চতার সাক্ষী খাতুনের একমাত্র কন্যা সন্তান মরিয়মের বয়স এখন মাত্র ১১ মাস। মা প্রতিবন্ধী হলেও শিশু মরিয়ম সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছে। বছর না পেরোতেই শিশু কন্যা মরিয়ম উচ্চতায় ছুঁয়ে ফেলেছে তার মাকে। একটি একটি করে দিন যাচ্ছে মরিয়ম বড় হচ্ছে, অপরদিকে প্রতিবন্ধী সাক্ষী খাতুনের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়তে থাকছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও শিশু কন্যা মরিয়মকে পরম মমতায় লালিত পালিত করছেন মা সাক্ষী খাতুন। মেয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের দুশ্চিন্তাও যেনো পাহাড় সমান হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য মায়েদের মতো সাক্ষী খাতুনও স্বপ্ন দেখেন মেয়ে মরিয়মকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। সময়মতো তাকে সুপাত্রস্থ করবেন।এই স্বপ্ন তার জীবনে কতখানি সহজ হয়ে ধরা দেবে তা তিনি জানেন না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দরিদ্র পিতা-মাতার ঘরে দুই পা বিহীন প্রতিবন্ধী সাক্ষী খাতুনের জন্ম হয়। সে উপজেলার জামাল ইউনিয়নের উল্লা গ্রামের নুর ইসলাম এর সাত ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার বড়। জন্মের পর থেকেই হতদরিদ্র পিতার সংসারে প্রতিবন্ধী সাক্ষী খাতুন অবহেলা অনাদর ও নানা সংকটে বড় হতে থাকে। জীবনের এক পর্যায়ে এসে একই উপজেলার তেলকুপ গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আলম হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে তার জীবনের আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হয়। সংসার জীবনেও সাক্ষী খাতুনের কপালে জোটেনি সুখের সন্ধান এবং ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা। যে কারণে স্বামীর সংসার ছেড়ে আবারো ফিরতে হয় দরিদ্র পিতার সংসারে। জীবনের এ পর্যায়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন সাক্ষী খাতুনের দিন চরম উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল ঐ সময় সে উপলব্ধি করলো নিজের মধ্যে আরেকটি প্রাণের অস্বিত্ব। সময় পেরিয়ে স্বাক্ষীর কোলজুড়ে ভুমিষ্ট হলো ফুটফুটে সুস্থ এক কন্যা সন্তান। তার সেই বুকের ধন মরিয়ম অভাব অনটনের মধ্য দিয়েই বড় হতে শুরু করলো। আর এক মাস পূর্ণ হলেই বছরের কোটায় পা রাখবে মরিয়ম। এরই মধ্যে বয়সে না হলেও উচ্চতার সে তার ২৭ ইঞ্জি উচ্চতর প্রতিবন্ধী মা সাক্ষী খাতুনের সমান হয়ে পড়েছে। মা সাক্ষী খাতুনের নিজের জীবন জীবিকা ঠিকঠাকভাবে চলে না তার উপর একমত্র শিশু সন্তানকে লালন পালন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। কেননা স্বামীর সাথে সম্পর্ক ইতি না টানলেও তিনি বউ বাচ্চার কোনো খোজ খবর রাখেন না বলে জানান স্বাক্ষী ।তাই উপায়ন্তু না পেয়ে মা মেয়ে এখন বাবার ঘাড়ে।কিভাবে চলবে তাদের জীবন সেই ভাবনায় সবসময় ঘুরপাক খায় সাক্ষীর মাথায়।প্রতিবন্ধী সাক্ষী খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, খুব কষ্টের জীবন আমার।নিজের বলতে আমার একটা ঘরও নেই। মেয়েটাকে নিয়ে এখন আমার যত ভাবনা।শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নিজে কিছু করতে চাই। সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা যদি আমার পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো মেয়েকে সাথে নিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে চলতে পারবো। সাক্ষী খাতুনের বাবা নুর ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধী মেয়ে ও নাতনীকে নিয়ে আমার যত চিন্তা। সরকারি সাহায্য সহযোগিতার যৎসামান্য পেলেও তা খুব বেশি কাজে লাগেনা।সাক্ষীর যদি একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে বোধহয় ওর জীবনটা ভালো চলতো। উল্লা গ্রামের বাসিন্দা মমিন হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই সাক্ষী খাতুনকে দেখছি।খুব অসহায় সে। সমাজের সামর্থ্যবান ও দায়িত্বশীল লোকেরা যদি একটু সুদৃষ্টি দিতেন তাহলে হয়তো মা ও মেয়ে ভালো থাকতে পারত।স্থানীয় ইউপি সদস্য ফশিয়ার রহমান বিশ্বাস বলেন, সাক্ষী খাতুনকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কর্মসংস্থান মূলক কিছু করে দেওয়া গেলে তার জন্য ভালো হতো। তবে এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী সাক্ষী খাতুনকে সমাজসেবা থেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। ভবিষ্যতেও নিয়ম অনুযায়ী এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

error: Content is protected !!