হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ওয়াপদা রোড সুগার মিলের উত্তর পাশে আবাসিক এলাকায় “তানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হেলথ কেয়ার প্যারালাইসিস থেরাপী সেন্টার “নাম দিয়ে দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে করা হচ্ছে অনুমোদনবিহীন এমএলএম ব্যবসা। এ ব্যবসাটি পরিচালনা করেন তানিয়া বেগম নামের একজন নারী। তিনি ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুজ্জামান নামের এক প্রবাসীর স্ত্রী।তিনি একজন ডাক্তার কিংবা থেরাপীস্ট না হয়েও থেরাপী সেন্টার খুলে সেখানে চাইনিজ ও কোরিয়ান পদ্ধতিতে থেরাপী প্রদানসহ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে চলেছেন। এখানে আসা সাধারণ মানুষদেরকে তিনি শরীরের বিভিন্ন স্থানে থেরাপি দিয়ে জন প্রতি ৩ শত থেকে ৫ শত টাকা নিয়ে থাকেন বলে জানা যায়।শুধু তাই নয় ; চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে ও বিভিন্ন এলাকায় নিজের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে সাধারণ রোগীদের অফিসমুখী করে তাদেরকে ভুলভাল বুঝিয়ে তাদের নিকট ফুড সাপ্লিমেন্টারি বলে আমদানিকৃত বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য,ঔষধ ও থেরাপী সরঞ্জাম বিক্রি করছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। তিনি একই সাথে ডাক্তার না হয়েও প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিক,শিরার সমস্যা, হাড়ের সমস্যা, মেদভুঁড়ি ও শরীরের ওজন কমানো, প্রতিবন্ধী সমস্যা, কিডনি, লিভার, হরমোন ও জরায়ুর সমস্যা, শরীরের যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ দিচ্ছেন ।তিয়ানশি বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানির হয়ে তানিয়া বেগম এর নিকট আসা ব্যাক্তিদেরকে তিনি বাংলাদেশে অনুনোদীত এমএলএম ব্যবসায় সম্পৃক্ত করেন। প্রতি বুধবার তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধারণ মানুষদের এমএলএম ব্যবসার ট্রেনিং করানোর মাধ্যমে ফুড সাপ্লিমেন্টারি ও থেরাপী যন্ত্র কেনার ব্যাপারে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সপ্তাহের ছয়দিন সকাল ১০ টা হতে ২ টা পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা রোগী দেখেন নিজ অফিসে বসে। আমদানিকৃত চা, কর্ডিসেপস নামক ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক, ক্যালসিয়াম, টুথ পেস্ট, সাবান ইত্যাদি উচ্চমূল্যে সাধারণ মানুষের নিকট বিক্রি করছেন। যেমন তিনি এক প্যাকেট চা বিক্রি করছেন ২১ ডলার, এক পাতা ক্যালসিয়াম বিক্রি করছেন ১৮ ডলার, কর্ডিসেপস ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক ১ ফাইল বিক্রি করছেন ৩৮ ডলার, একটি টুথ পেস্ট বিক্রি করছেন ৫.৫ ডলার এবং একটি সাবান বিক্রি করেন ৫ ডলারে।হেলথ কেয়ার ও থেরাপী সেন্টার পরিচালনার জন্য সরকারি যে সব বিধিবিধান মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা আবশ্যক তার কোনো কিছুই তার কাছে নেয়।ভুক্তভোগী মোসাম্মৎ সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক বাত ব্যথার রোগী জানান, আমি একজনের মাধ্যমে তানিয়া আপার অফিসে যাই। সেখানে যে ট্রেনিং করি, শরীর ব্যাথার জন্য থেরাপী নেই।আমি তার কাছ থেকে আজ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার ওষুধ খেয়েও এখনো পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। এখন আবার তিনি থেরাপীর জন্য মেশিন কেনার ব্যাপারে আমাকে বোঝাচ্ছেন। আমার মতো অসহায় মানুষ তার কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে থেরাপী মেশিন কিভাবে কেনব।
প্রতারণার স্বীকার পৌর এলাকার নদীপাড়ার ট্রাকচালক শাহীন বলেন,গ্যারেজ মিস্ত্রি সামাদের মাধ্যমে এই মহিলার কাছ থেকে টুথ পেস্ট কিনে আমি প্রতারিত হয়েছি। সামাদ হলো তার অন্যতম এজেন্ট।শুধু তাই নয় তার স্বামী শহর এবং গ্রামে ঘুরে ঘুরে এজেন্ট তৈরি করে বেড়ায়।সরজমিনে তার অফিসে যেয়ে দেখা যায়,তানিয়া বেগম বেশ কয়েকজন মহিলাকে কাউন্সিল করছেন। কেউ আবার থেরাপী মেশিনের সাহায্যে থেরাপি নিচ্ছেন।প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী তানিয়া বেগমের সাথে বিভিন্ন রোগের চাইনিজ ও কোরিয়ান পদ্ধতিতে সেবা দেওয়া এবং মানুষের সাথে এম এল এম ব্যাবসার মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে আমরা শুধু রোগের ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করি এবং কেউ যদি ফুড সাপ্লিমেন্টারি কোনো পণ্য কিংবা থেরাপী মেশিন নিতে চাই তাহলে তার নিকট আমি তা বিক্রি করি। আর সকল পণ্য এমএলএম পদ্ধতিতে বিক্রি হয়ে থাকে বলেও তিনি জানান।। পণ্য বিক্রি, থেরাপীস্ট না হয়েও রোগীদের থেরাপী দেওয়ার সরকারি অনুমোদন সম্বলিত কোন বৈধ কাগজ তিনি এই প্রতিবেদককে ঐসময় দেখাতে পারেননি।কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন,সরকারি বিধি বহির্ভূতভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং ঔষধ বিক্রি কোন সুযোগ নেই। আমি আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খোঁজখবর নিয়ে দেখব। আইনের ব্যত্তয় ঘটলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।