হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
রোজিনা আক্তার নামের এক প্রসূতি মা ২২ শে জানুয়ারি উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে দ্বিতীয় বারের মতো ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন । তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামের ইকবল হোসেনের স্ত্রী।স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য অস্ত্রপচারের স্থান ও চিকিৎসক ভেদে মোটা অংকের একটি চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হয় রোগীকে। কিন্তু সরকারি এই হাসপাতালে অস্ত্রপচারের কোনো খরচ ছাড়াই প্রসূতি রজিনার চিকিৎসা সেবা চলছে। সরকারি হাসপাতালের এই সেবাই অভিভূত রজিনা আক্তার ও তার পরিবার। সরকারি এই হাসপাতালে এভাবেই কোনো খরচ ছাড়া অস্ত্রপচার করে চলেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলমগীর হোসেন। উপজেলার ২০ তম স্বস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে ১৪ নমেম্বর ২০২১ সালে যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বিনামূল্যে ৪ শত ০১ জন রোগীকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৩১৩ জন প্রসূতি মায়ের অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সেবা দেন তিনি । ২০২২ সালে ১৬৬ জন এবং ২০২৩ সালে ১৪৭ জন প্রসূতি মায়ের অস্ত্রপচার করেন। এছাড়াও তিনি গত দুই বছরে ৫০ জনের এপেন্ডিসাইট,১০ জনের হার্নিয়া ,২ জন রোগীর হাইড্রসিল এবং ২৬ জনের সুন্নতে খাৎনা অপারেশন করেন সম্পূর্ন ফ্রি।
হাসপাতালে তিনি রোগী দেখেন সময় নিয়ে,রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, এমনকি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে অনেক গরিব রোগীর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ঔষধ ক্রয়ের ব্যবস্থাও করে দেন ।স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এমন সেবায় স্থানীয়রা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ইতিমধ্যে অনেকেই তাকে "গরীবের ডাক্তার" বলে ডাকতে শুরু করেছেন। শুধু ভালো ডাক্তারই নন একজন ভালো প্রশাসক হিসাবেও অধিনস্ত সহকর্মীদের নিকট প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন ডাঃ আলমগীর হোসেন। স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে নিজ উদ্যোগে করেছেন হাসপাতাল চত্তরে ফুলের বাগান,সাইকেল গ্যারেজ,নার্সদের একটি নতুন ডিউটি কক্ষ (ব্যক্তিগত অর্থায়নে) ,আল্ট্রসনোগ্রাফী ও এক্সরে মেশিন সচল,ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে অপারেশন থিয়েটারের জন্য একটি জেনারেটরও প্রদান করেছেন।পুরো হাসপাতালের পরিষ্কার পরিছন্নতার দিকটিকে অগ্রাধিকার প্রদান করে ময়লা আবর্জনা রাখার নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করেছেন। ইপিআই টিকা,সাপে কাটা এবং কুকুর বিড়ালের কামড়ের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা শেষ হওয়ার আগেই চাহিদাপত্র দিয়ে সংগ্রহে রাখতে ভুল করেন নাই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা । কিছুদিন আগে হঠাৎ করে সারা দেশে স্যালাইনের সংকট দেখা দিলেও কালীগঞ্জ হাসপাতালে ছিলোনা কোনো সংকট।ঐ সময় দূরদর্শী গুণে হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ সচল রেখেছিলেন তিনি। রোগীদের সরকারি ঔষধ সরবরাহ সংকটহীন ভাবে ঠিক রেখে চলেছেন।প্রসূতি মায়েদের জন্য ১০ বেডের একটি আলাদা ওয়ার্ডও হাসপাতালে স্থাপন করেছেন। অনেক সময় সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালিয়ে অফিস করতে দেখা গেছে এই কর্মকর্তাকে । উপজেলার সরকারি এ হাসপাতালে ১৭ জন ডাক্তারসহ মোট ১শত ৩৮ জন স্টাফের যথাযত দায়িক্ত পালন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দক্ষ নেতৃত্বে সেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। উপজেলার সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলমগীর হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, যোগদানের পর থেকে সকল সহকর্মীদের সাথে নিয়ে উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবায় গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাচ্ছি। চিকিৎসা সেবা একটি মহৎ পেশা। রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলতে পারলে নিজের মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দের অনুভূতি কাজ করে । ইতিমধ্যে আমি ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করণ, বলরামপুর ও বারবাজার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১০ শয্যার বেড স্থাপন ,পুরো হাসপাতাল এলাকায় জরাজীর্ণ পুরাতন প্রাচীরের স্থানে নতুনভাবে বাউন্ডারি দেওয়া , নতুন দ্বীতল ভবনের উপর ৩য় তলা নির্মাণ ও একটি কনফারেন্স কক্ষের জন্য প্রস্তাবনা প্রদান করেছি। এই কাজগুলোর বাস্তবায়ন হলে সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে আশা রাখি ।