হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। মেম্বরকে কি কারনে ও কিভাবে হত্যা করেছে আটককৃত তিন জন ঝিনাইদহ আদালতে হত্যার সবকিছু স্বিকার করেছে। সোমবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে উপজেলার মালিয়াট গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। মালিয়াট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আনোয়ার হোসেন শারিরিক ভাবে অসুস্থতার কারনে ১১ জুলাই যশোর সিএম এইচ হাসপাতাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে আসে। ১২ জুলাই সকালে স্ত্রী মাহফুজা বেগম(৪৮) মেয়ে উম্মে সুমাইয়া ইয়াসমিন মিতু(২৩) মেম্বর কে হত্যার পরিকল্পনা করে। সকাল ৯টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় খাবার খাওয়ার শেষে ওষুধ সেবনের সাথে একটি ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় আনোয়ার হোসেনকে।অল্প কিছু সময় পর তিনি ঘুমিয়ে পড়লে স্ত্রী মাহফুজা বেগমের ব্যবহারিত মোবাইল ফোন দিয়ে মেয়ের প্রেমিক পাচকাহুনিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাজ্জাত হোসেন চয়ন(২৫) এর কাছে ফোন দিয়ে তাদের বাড়িতে আসতে বলে।
চয়ন জানায়, আমি লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরা অবস্থায় মাঠে কাজ করছি। মেয়ের মা বলে তুমি বাবা ঐ অবস্থায় বাসায় চোলে আস কাউকে না জানিয়ে। চয়ন প্রেমের টানে চোলে আসে প্রেমিকা মিতুর বাড়িতে, বাড়িতে তখন হত্যার আসামী তিনজন ছাড়া কেউ ছিল না। আটকিয়ে দেওয়া হয়বাড়ির প্রবেশ দরজা ও আনোয়ার হোসেনের ঘরের জানালা দরজা। প্রথমে মাহফুজা হত্যার বিষয়ে প্রস্তাব করে আমরা তিনজন আনোয়ার কে খুন করতে হবে, না হলে মেয়ে তোমার সাথে বিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আনোয়ার হোসেন যে ঘরে ঘুমিয়ে ছিল তিনজন একসাথে প্রথমে মেয়ে মিতু বাবার মুখ ও বুকের উপরে বালিশ চেপে ধরে, স্ত্রী মাহফুজা দু,পা চেপে ধরে ও চয়ন পেটের উপরে চেপে ধরে রাখে। এসময় আনোয়ার ঝাপদিয়ে উঠে পড়লে মেয়ে মিতু খাটের নিচে থাকা লোহার সাবল দিয়ে বাবার মাথায় আঘাত করলে খাট থেকে ড্রেসিন টেবিলের উপর পড়ে কাঁচ ভেঙ্গে যায়।
ঘরে থাকা ধারালো লোহার দা দিয়ে মেয়ে বাবার গলায় তিন টা কোপ দিলে ঘরের মধ্যে লুটিয়ে পড়ে। ঘরথেকে টেনে হেচড়ে আনা হয় ডাইনিং রুমে, মৃত্যু নিশ্চিত হলে প্রেমিক সাজ্জাত হোসেন চয়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজ গ্রামের বাড়ি বেলা ১২ টার দিকে চোলে যায়। মেয়ে ও মা চিৎকার করে প্রচার করে মেম্বর পড়ে গিয়ে শোকেচের কাচে গলা কেটে গেছে, প্রতিবেশিরা ছুটে এসে তাকে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিতে চাইলে মেয়ে ও মা জানায় যশোরে নিতে হবে ভাল চিকিৎসা দিতে কিন্তু যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষনা করেন। এরপর যশোর কোতয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা হয় ও ময়নাতদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু ময়নাতদন্তে আনোয়ারের মাথায় আঘাত ও জবাই করে হত্যার প্রমান মেলে। এ রিপোর্ট প্রশাসনের কর্মকতাগন প্রকাশ না করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাটি আমলে নিয়ে গোপনে তদন্ত করলে মেম্বর হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারা বিষয়টি কালীগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করলে ১৭ জুলাই রাতে তাদের তিনজন কে আটকের পর হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে আসামিরা স্বীকার করে। ১৮ জুলাই মেম্বরের ভাই আব্দুল আজিজ মন্ডল বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলা নং ১৭। এ মামলার তদন্তকারী অফিসার প্রকাশ কুমার বলেন, আসামীরা সবাই হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে।উম্মে সুমাইয়া ইয়াসমিন মিতুর বিয়ে হয়েছি,সেখানে সংসার না করে বাবার বাড়িতে এসে পাশের গ্রাম পাচকাহুনিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার মন্ডলের ছেলে সাজ্জাত হোসেন চয়নের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় তিন বছর প্রেমে আবদ্ধ চয়ন ও মিতু দু,জনের বিয়ের কথা হয়। বিয়ে দিতে আনোয়ার হোসেন রাজি ছিল না। ১২ জুলাই হত্যারদিন সকালে এ বিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে গোলযোগ হয়। ফলে আসামী তিন জনের পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করে। আনোয়ার হোসেন সেনাবাহিনি চাকরি শেষ করে ৬ বছর আগে অবসরে এসে বাড়িতে বসবাস করতেন। পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ধারালো দা উদ্ধার করা হয়েছে।