হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় ভুয়া বিল ভাউচার করে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজাহান শেলীর বিরুদ্ধে। কালিগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাতঘরা গ্রামে অবস্থিত বিদ্যালয়টির নামে প্রধান শিক্ষক কালিগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ডে “শিপন কম্পিউটার” নামের একটি দোকান থেকে ৩ জুলাই ২০২৩ তারিখ এইচপি কোরআই ফাইভ ব্র্যান্ডের একটি ল্যাপটপ(মূল্য ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৩ শত টাকা) এবং একই ব্র্যান্ডের একটি প্রিন্টার (মূল্য ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৭ শত টাকা) কিনেছেন। অনুসন্ধান করে জানা যায়, শিপন কম্পিউটারের দোকানের ১৬৫৯ নং চালানে উল্লিখিত মোট ৭৫ হাজার টাকার ল্যাপটপ ও প্রিন্টার দোকানের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম শিপন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের নিকট বিক্রি করেননি বলে জানান। একইভাবে বাজারের মুক্তার লাইব্রেরী থেকে প্রতিটি বই ৬ শত টাকা মূল্যে মোট ৫০ টি বই ৩০ হাজার টাকায় কেনা দেখানো হয়েছে।অনুসন্ধানে মুক্তার লাইব্রেরীর স্বত্বাধিকারী মুক্তার হোসেন ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট ০৬৮ নং চালানে কোন বই বিক্রি করেননি বলে জানান।
অর্থাৎ শিপন কম্পিউটার এবং মুক্তার লাইব্রেরী থেকে কোন মালামাল ক্রয় না করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে পিবিজিএসআই স্কিমের অনুদানের অর্থ ব্যায় দেখিয়ে উপজেলা অফিসে এই ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়েছেন। বাস্তবে কোনো কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং বই তিনি এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেনেননি। অথচ নিয়মানুযায়ী ভুয়া ক্রয় কমিটি দেখিয়ে স্কুলের তিনজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে তাদের স্বাক্ষরের পাশাপাশি ভুয়া বিল ভাউচার গুলোতে সভাপতি একে জিল্লুর রহমান আজাদ ও প্রধান শিক্ষক নিজেই স্বাক্ষর করে তা জমা দিয়েছেন। এমন চতুরতার অবলম্বন করেছেন প্রধান শিক্ষক, যাতে করে বিষয়টি ধরা না পড়ে। উল্লেখ্য, ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ হয়।সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধীদের সমুদয় টাকা ফেরত না দিয়ে এই প্রধান শিক্ষক ও তার অনুগতরা ক্রমাগতভাবে ওই দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরিবারের উপর চাপ প্রয়োগ করছেন বলেও জানা যায়। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজাহান শেলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাল না কিনে ভাউচার প্রস্তুত করে জমা দেওয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করে বলেন, আগেই ভাউচার জমা দেওয়ার নিয়ম। এ কারণে এমনটি করা হয়েছে। এই টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না। ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এ কে জিল্লুর রহমান আজাদ বলেন, আমরা তো শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এর জন্য সরকার থেকে ল্যাপটপ পেয়েছি। আমাদের ল্যাপটপ ও প্রিন্টার কেনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল জানি। পরে সেটা কি হয়েছে আর বলতে পারিনা। আর বই ক্রয়ের ব্যাপারটা আমি জানিনা। কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, পিবিজিএসআই স্কিমের অনুদানের টাকা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নামে তাদের হিসাবে ঢুকেছে। পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যয় করার কথাও বলা হয়েছে তাদেরকে। কোনো খাতে ব্যয়ের ভাউচার আগে থেকে অফিসে দেওয়ার জন্য কাউকে বলা হয়নি। সকলকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বিল ভাউচার জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল,সবাই তা করেছেও। এই অনুদানের কোন অর্থ যদি নিয়মের বাইরে ব্যয় করা হয় তাহলে তার সব দায়-দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা পরিষদ বহন করবে বলেও তিনি জানান।