কালীগঞ্জে দেড় মাস বয়সী মুনতাহার  জন্ম নিবন্ধন ফি দেওয়ার সামর্থ্যও নেই বাবার অতঃপর ঋণের দায়ে  আত্মহত্যা 

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

হুমায়ুন কবির কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কামাল বিশ্বাস (৪৫) নামের এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে বলে জানা যায় ।তিনি উপজেলার সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের কোমলাপুর দক্ষিণপাড়ার মৃত আবদুল গনির ছেলে। ২৫  সেপ্টেম্বর দুপুরের পর বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি কামাল বিশ্বাস। পরিবারের লোকজন রাতে বাড়ি না ফেরায়  তাকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ওই গ্রামের খা গোষ্ঠীর পারিবারিক গোরস্থানে গলায় রশি পরানো অবস্থায় চিত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। রশির বাকি অংশ সেখানে থাকা গাছে ঝুলছিল। এমন অবস্থায় মৃতের শ্যালক পলাশ দেখতে পেয়ে বাড়িতে খবর দেই। পরবর্তীতে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ মর্গে পাঠায়। কামাল বিশ্বাস পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতেন তিনি। একমাত্র অনার্স পড়ুয়া ছেলে সাগরের   লেখাপড়ার খরচ জোগানো , মাত্র দেড় মাস আগে জন্ম নেওয়া মেয়ে মুনতাহারের পেছনে ব্যায় , প্রাত্যহিক সংসার খরচ, নিজের শারীরিক অসুস্থতা জনিত ঔষধ ক্রয় এর ব্যয় কোন কিছুই সংকলন করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এরকম পরিস্থিতিতে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঋণ নিয়েছিলেন। ঐসব সংস্থার লোকজন  পাওনা টাকার জন্য তাকে নিয়মিত চাপও দিতেন। নিজের বলতে কিছুই ছিল না তার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভিটাবাড়ির জমিটুকুও তিনি দেনা পরিশোধের জন্য চাচাত ভাইয়ের কাছে প্রায় চার বছর আগে বিক্রি করে দেন। এসব কারণে নিঃস্ব কালাম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।সাংসারিক,মানসিক এইসব যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণের জন্যই তিনি  আত্মহননের পথ বেছে নেন বলে স্থানীয়রা জানান।
কালাম বিশ্বাসের চাচাতো ভাই আব্দুল কাদের জানান,আমার এই ভাইটি খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলছিল। সংসারে বিভিন্ন প্রয়োজনে তাগিদে অনেকের কাছ থেকে সে  ধার দেনাও করে।ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যার কারণে শারীরিকভাবে কর্মশক্তি সেভাবে না থাকাই তেমন কাজও করতে পারত না। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে সংসার চালানোর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ যোগান দিতে সে পারত না। একমাত্র দেড় মাস বয়সী মেয়ের জন্মনিবন্ধন করার জন্য ২৫ টা ফি দেওয়ার সামর্থ্যও তার ছিল না।  সম্প্রতি বেশ কিছু এনজিও থেকে সে  ঋণ নিয়েছে শুনেছি। ঐসব এনজিওর লোক তার বাড়িতে এসে পাওনা টাকার জন্য প্রচন্ড চাপ দেই। মূলত ঋণের বোঝা পরিশোধ করতে না পেরেই সে আত্মহত্যা পথ বেছে নেই।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। পরবর্তীতে ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঝিনাইদহে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
error: Content is protected !!