কালীগঞ্জে ড্রাগন ফলে টনিক ও হরমোন স্প্রে বাড়ছে,স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কায় ক্রেতারা 

লেখক: Champa Biswas
প্রকাশ: 1 year ago

হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ,(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক এমনকি বিদেশ ফেরত ব্যক্তি ও বেকার যুবকদের কাছে লাভজনক ফসলের নাম ড্রাগন। প্রায় এক দশক আগে এ ফলটির চাষ শুরু হয় কালীগঞ্জে। সময়ের সাথে বাড়তে থাকে এর ব্যাপকতা। অপরুপ রং এবং অসাধারণ স্বাদ ও ঔষধি গুনসম্পন্ন হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ড্রাগন ফল। বাজারে চাহিদা থাকায় ড্রাগন চাষীরা অধিক লাভবান হওয়ার আশায় বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ বাদ দিয়ে টনিকসহ বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগের দিকে নজর দিয়েছেন। ড্রাগন ফলের আকার বড় করতে অধিকাংশ ড্রাগন চাষী ইন্ডিয়ান ডক্টর ডানস ড্রাগন টনিক ব্যবহার করছেন। বর্তমানে অনেকেই টনিকের পরিবর্তে প্লানোফিক্স ও পাওয়ার ট্যাবলেট পানির সাথে মিশিয়ে ধরন্ত ফলে স্প্রে করছেন। ফলে ড্রাগন তার আসল লাল রং হারিয়ে লাল-সবুজে পরিণত হচ্ছে। রাসায়নিক এ সকল পদার্থ স্প্রে করা ফল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা নিয়ে ক্রেতা সাধারনের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ড্রাগন ফল ধীরে ধীরে যখন সাধারণ মানুষের কাছে পছন্দের একটি ফলের তালিকায় যোগ হতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময়ে কতিপয় অসাধু কৃষক গাছে ফলটি থাকা অবস্থায় দ্রুত বড় করার জন্য হরমোন স্প্রে করছেন।কালীগঞ্জে প্রথম দিকে হরমোনের ব্যবহার কম দেখা গেলেও দিন যত যাচ্ছে এর ব্যবহার ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষিরা জানান, টনিক ও হরমোন ঔষধ পানির সাথে মিশিয়ে গাছে ফুল ফোটার কয়েক দিন পরেই স্প্রে করা হচ্ছে। স্প্রে করার ফলে এক একটি ফল ৪০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। এতে করে ঐসব ফলের খোসা মোটা ও পুরু হয়ে যাচ্ছে। স্বাদ ও রঙেও আসছে পরিবর্তন।অধিক লাভের আশায় চাষীরা এটি করছেন। ড্রাগন চাষীরা বর্তমানে চিলেটেড জিংক, সলুবর বরণ,প্লানোফিক্স,মিরাকুলান, জিব্রালিক ট্যাবলেট ব্যবহার করেন। এছাড়া ইন্ডিয়ার ডক্টর ডনস ড্রাগন টনিক ব্যবহার করেন। যা অবৈধভাবে দেশে আনা হচ্ছে। আবার এ টনিক দেশের মধ্যে নকল হচ্ছে বলেও তারা জানায়।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ উপজেলার ২১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে। আর হেক্টর প্রতি ২৬ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন করে তা বাজারজাত করছে চাষীরা । ড্রাগনের চাষ সব থেকে বেশি উপজেলার পৌর এলাকার শিবনগর, চাঁচড়া, মালিয়াট কাষ্টভাঙ্গা ও রায়গ্রাম এর মাঠে । এক একজন কৃষক দুই বিঘা থেকে শুরু করে ২৫ বিঘা পর্যন্ত ড্রাগনের চাষ করেছেন বলেও জানা যায়। ড্রাগন ফলের নিয়মিত ক্রেতা তানভীর কবির বলেন, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল। বাড়ির সকলের কাছে ফলটি খুবই জনপ্রিয়। রাসায়নিক উপায়ে ফলটি বড় করা হচ্ছে, এতে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাই ফলটি দ্রুত পরীক্ষা নীরিক্ষা করা জরুরি।তবে টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে অবশ্যই এই ফল খাওয়া থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত।ঝিনাইদহ জেলা ড্রাগন চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম টিপু সুলতান জানান, ড্রাগন চাষে ক্ষতিকর এবং অনুমোদনহীন টনিক কিংবা হরমোন এর ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে চাষী,এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও কর্মকর্তার সাথে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি।বর্তমানে আমাদের জেলায় উৎপাদিত ড্রাগন এক্সপোর্ট হচ্ছে। ড্রাগন ফলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ম্লান করার জন্য কতিপয় অসাধু চাষী টনিক কিংবা বিভিন্ন হরমোন স্প্রে ব্যবহার করছেন তাদের বাগানে। ইতিমধ্যে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার নিকট হরমোন স্প্রে করা ফলের স্যাম্পল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা পাঠিয়েছি।রিপোর্টে যদি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু আসে তাহলে আমরা অবশ্যই সমিতির মাধ্যমে ওইসব চাষীদের শনাক্ত করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব যাতে করে তারা টনিক বা হরমোন স্প্রে থেকে বিরত থাকে।কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব আলম রনি বলেন, ড্রাগন চাষে গোপনে টনিক ব্যবহার হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে আমরা ড্রাগন চাষীদেরকে প্রাকৃতিক ও জৈব সার ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি। মাত্রা অতিরিক্ত টনিক ব্যবহার শুধু ড্রাগন কেন সব ফলের জন্যই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল খাদ্য হিসেবে অনিরাপদ হতে পারে।তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ঐ ফলকে অনিরাপদ বলা যাবে না।

ঝিনাইদহ জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাধন সরকার বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ড্রাগন ফলের বাজার মনিটরিং করছি।যেহেতু টনিক বা হরমোন স্প্রের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের ওজন বাড়ানো হচ্ছে।সেহেতু ওই ড্রাগন ফল ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা ঢাকা হেড অফিসে পাঠাবো। আর তখনই কেবল বলা যাবে টনিক ব্যবহার করে উৎপাদিত ড্রাগন ফল নিরাপদ কি অনিরাপদ।

error: Content is protected !!