হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০১৯-'২০ অর্থবছরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য এ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রায় চার বছর পর ১০ মে ২০২৩ কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বসে ওইসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ডেকে অতি গোপনে মালামাল ফেরত দিলেন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানু । প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত মালামাল ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানুর (বর্তমান কর্মস্থল কুষ্টিয়ার খুকশা উপজেলা ) অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি দৃশ্যত প্রমাণিত হলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ ব্যাপারে বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,যেসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপকরনসমূহ বিতরণ করা হয়েছে তাদের অনেকেই ঐ সময় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় সমূহে অধ্যায়নরত ছিলনা।
উপজেলার কোলা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সজীব ও তানজিলা নামের দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হুইল চেয়ার, মহিষাহাটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহবুবুর রহমান নামের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র, কাকলাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রীতম মিত্র নামের একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র, সিংদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবির হাসান নামের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র, বড় শিমলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলসী রানী ও শান্তা ইসলাম নামের দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ২০২০ সালের শ্রবণযন্ত্র এখন দেওয়া হয়েছে।প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ঢাকতে সাবেক টিও তড়িঘড়ি করে ওই টাকার মালামাল কিনে এনে শিক্ষকদের মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিলেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মেহেদী সোহরাব হোসাইন মালামাল বিতরণের সময় নিজে উপস্থিত থেকে সাবেক টিওকে সহযোগিতা করেন।
এ ব্যাপারে কোলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান জানান , ১০ মে সাবেক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানু কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে বসে আমার স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত দুইটি হুইলচেয়ার প্রদান করেন। হুইল চেয়ার দুইটি নিয়ে এসে আমরা রেজিস্ট্রারে উল্লেখিত দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হাতে তুলে দিয়েছি।
কোলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সে সময়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম ও সুরমানী বেগমের মেয়ে তানজিলা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার মা সুরমানী বেগম এই প্রতিবেদককে জানান, আমার মেয়ের জন্য সরকার হুইলচেয়ার দিলেও তা প্রায় ৪ বছর পর কয়েক দিন আগে আমরা হাতে পেয়েছি।
উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ২০১৯-'২০ অর্থবছরের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য সরকারিভাবে ৪৮ হাজার ৫ শত টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানু উক্ত বরাদ্দের টাকা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্যয় না করে ভুয়া রেজিস্টার করে বিল ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন। তার এ কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মেহেদী সোহরাব হোসাইন সার্বিক সহায়তা করেন বলে জানা যায়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে "প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ " শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাৎকারি সাবেক ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা এবং তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আজও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
অভিযুক্ত সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানুর সাথে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানান,উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটা তদন্ত হয়েছে শুনেছি।খুব দ্রুত সাবেক ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।