ডেস্ক রিপোর্টঃ
কপোতাক্ষ নদী কাটা হয়ে গেলে নদীতে আবার পানি থাকবে এবং জোয়ার-ভাটা ও হবে। আবার আমরা কপোতাক্ষ নদে মাছ ধরতে পারবো, এবং তাহা বিক্রয় করে বাব-দাদাদের মতো আবার সংসার চালাতে পারবো। এভাবে আশার কথা জানিয়েছেন ঝিকর গাছা গঙ্গানন্দপুর, ঝাঁপা, বাকড়া কপোতাক্ষের পাড়ের বসবাসরত ভুক্তভুগী লোকজন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় নদের ৫ কিলো পুনরায় খননকাজ শুরু হয়েছে। উপজেলার মাগুরা ফুলতলা গ্রাম থেকে খননকাজ শুরু করেছে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএএনসিএমএস (জেভি)।
সম্প্রতি শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের ২ জুন পর্যন্ত, যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৭ টাকা। খননের গড় প্রস্থ প্রায় ৪৫ দশমিক ৫৫ মিটার এবং গড় গভীরতা ১ দশমিক ৪০ মিটার। এ ছাড়া খননের তলা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ মিটার।
কপোতাক্ষ নদের পাড়ের বসবাসরত বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দেড় যুগ ধরে নদী ভরাট হওয়ার কারনে মাছ শিকার করা যায়না, নদীতে জোয়ার ভাটা না থাকার কারনে। কপোতাক্ষ নদের পাড়ের বসবাসরত লোকজন আরো বলেন শুল্ক মৌসুমে এই নদীতে একেবারেই পানি থাকে না, এখান থেকে বাব দাদারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, কিন্তু বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারনে মাছ শিকার না করতে পেরে অন্য যায়গা থেকে মাছ ক্রয় করে তাহা গ্রামে বা বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালাই।
ঝিকর গাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের একজন লোক বলেন নদী কাটা শুরু হয়ে গেছে শুনে আমাদের খুব ভাল লাগছে, এই নদী আমাদের বাঁচা-মরার বিষয়। আশা করি, কপোতাক্ষ নদী আবার আমাদের মাঝে আশীর্বাদে পরিণত হবে।
ঝিকর গাছা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আরো একজন বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদী খননের কথা শুনে আমরা আশার আলো দেখছি। তবে যদি নদী সম্পূর্ণ খনন না করা হয়, তবে পানি বের হতে না পেরে আমাদের এ অঞ্চল ডুববেতো! যেমন টা হিয়েছিলো ইং ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যা ও নদের উপচে পড়া পানিতে এ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। এর পর থেকে কপোতাক্ষ নদের জোয়ার-ভাটা বন্ধ হওয়ায় বর্ষাকালে নদের উপচে পড়া পানিতে পাড়বাসী জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর শুষ্ক মৌসুমে একেবারে পানি শুকিয়ে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কপোতাক্ষ নদী দখল। নদীর পাড় দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা স্থাপনা, খনন করা হয়েছে ইচ্ছেমতো পুকুর-জলাশয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে নদী বাঁচাতে আন্দোলনে নামে ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’।
কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন করতে গিয়ে একবার মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের ঝাঁপা গ্রামের শহিদুজ্জামান পুতুলের নেতৃত্ব সরসকাঠি ব্রিজের পাশে বেঁধে রাখা ভেড়ি বাঁধ কাটার সময় ঐ এলাকার লোকের হাতে পুতুলের নেতৃত্বে বহু লোক আহত হয়। এই কমিটির ঝিকরগাছা শাখার সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘নদ খালের মতো করে শুধু খনন করলে হবে না। এর সঙ্গে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, নদের জায়গা নদে ফিরিয়ে দেওয়া ও মাথাভাঙ্গায় উজানের সঙ্গে সংযোগ নদী সংযোগ করে দিতে হবে। তাহলে কপোতাক্ষ আবার যৌবন ফিরে পাবার সম্ভাবনা আছে, তাহা নাহলে অল্প, অল্প করে খনন কপোতাক্ষ আবার পুনারয় পলিতে বুজে যাবে এবং আগের মত হয়ে যাবে। এই এলাকার অর্থাৎ কপোতাক্ষের পাড়ের বসবাসরত লোকের দাবী’ নদী টি সম্পুর্ন খনন করে দিলে বর্তমান যেভাবে নদীর পাড়ের মানুষের মনে আনন্দ ফিরে এসেছে, এবং চাষীরা ভাল ফসল ফলিয়ে ঘরে তুলে স্বস্থি ফিরে পেয়েছে, এভাবে যাতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারে সেই আশা ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএএনসিএমএস’র (জেভি) কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সবুজ হোসেন বলেন, ‘খননকাজ ইং ২০২১ সালের ১লা আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নদীতে পানি বেশি থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পানি কমে যাওয়ায় প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় কপোতাক্ষ নদী শুধু ঝিকরগাছায় না, মোট ৭৯ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হবে।’
কপোতাক্ষ নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্যতম বড় নদী। নদীটি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত। এ নদীর উৎপত্তিস্থল চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে এবং এটি পরে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব ও কপোতাক্ষ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় কাছে শিবসা নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার (৪৯০ ফুট), গভীরতা ৩ দশমিক ৫ থেকে ৫ মিটার (১১.৫ থেকে ১৬.৪ ফুট)। ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ নদ অবস্থিত।
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক, নিউজবিডিজার্নালিস্ট২৪