বিপুল রায়,স্টাফ রির্পোটার কুড়িগ্রামঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে একটি মাত্র লাইট (বাল্ব) ও ছোট একটি ফ্যানে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৭ হাজার ২শ টাকা। সরকারের দেওয়া বিধবা ভাতা আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। থাকার একটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে তাতে একটি মাত্র লাইট (বাল্ব) জ্বালান। ঘরের বেড়া কেটে এমনভাবে বাল্বটি লাগানো হয়েছে যেন একই সাথে ঘর ও ঘরের বাইরে আলো পাওয়া যায়। তীব্র গরম থেকে রেহাই পেতে ঘরে বিছানার ওপর ছোট একটি মিনি ফ্যান চালান। জীর্ণ রান্না ঘরে কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তারপরও কাছিরনের একটি লাইট আর ছোট একটি ফ্যানের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৭ হাজার ২০০ টাকা।
এলাকাবাসী জানায়, অস্বাভাবিক বিলে কাছিরনের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম। বিলের কাগজ নিয়ে এর বাড়ি ওর বাড়ি করে অস্থিরতায় দিন কাটছে তার। দুইদিন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর অফিসে গেলেও কোনও সমাধান মেলেনি। বিল নিয়ে দিনমজুর এই নারী দিশাহারা। তিনি এর সমাধান দাবি করে তাকে ঝামেলামুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। কাছিরন উলিপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের রামদাস ধনিরাম সরদার পাড়া এলাকার কাশেম আলীর স্ত্রী। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে একা বসবাস করেন।
কাছিরনকে দেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মে মাসের বিলের কাগজে দেখা গেছে, বর্তমান ইউনিট ৬০, পূর্ববর্তী ইউনিট ০ ও ৭১৬। ব্যবহৃত ইউনিট উল্লেখ করা হয়েছে ০। তবে গড় বিল উল্লেখ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৬২ টাকা। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিল পরিশোধ হলে কাছিরনকে অন্যান্য চার্জ সহ সর্বমোট ৭ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
কাছিরন বেওয়া জানান, বিদ্যুৎ সংযাগ নেওয়ার পর ঘরে একটি মাত্র লাইট আর একটি মিনি ফ্যান ব্যবহার করে আসছেন। এর বাইরে তিনি কোনও বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন না। প্রতি মাসে ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছিল। এতো টাকা করে বিল আসায় মার্চ মাসে তিনি তার মিটারটি পরিবর্তন করে নেন। এরপর দুই মাস তাকে বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। মে মাসে তাকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিবেশিদের কাছ এতো টাকার বিদ্যুৎ বিল আসার কথা শুনে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম।কাছিরন বলেন, ‘মাইনষের বাড়িত কাজ করি আর সরকারের ভাতার টাকায় কোনরকম সংসার চলে। এতো টাকা বিল হয় কেমন করি। বিলের কাগজ আসার পর ভাত রান্না করবার পাই না। চিন্তায় চিন্তায় ইয়ার উয়ার বাড়ি যাই। বিলের কপি নিয়া দুইদিন অফিস গেছি। কোনও কথায় শোনে না। ৭ হাজার ২শ টাকা পরিশোধ করবার কইছে। আমি গরীব মানুষ, এতো টাকা কেমন করি পরিশোধ করি। তোমরা ইয়ার সমাধান করি দেও।’
কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর অফিসের ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার (ডিজিএম) সোহানুর রহমান কাছিরনের বিদ্যুৎ বিল ৭ হাজার টাকা হওয়া অস্বাভাবিক বলে স্বীকার করে বলেন, বিলের কাগজে যে রিডিং উল্লেখ করা হয়েছে সেটি আমার কাছেও অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল সংশোধন করে দেয়া হবে।