রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়। বিনষ্ট হয় চরের মানুষের কৃষি ফসল। ফলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম সংকটে। কুৃড়িগ্রামের রৌমারীতে এমন পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত ১৮০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িছেন সরকার এবং একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ, বাংলাদেশ। তারা দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে।
আর তাদের সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।সংস্থাটি এ বছর রৌমারী উপজেলার ৬টি চরের ১৮০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সহযোগিতা করছে। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসব্জির বীজ দেওয়া ছাড়াও ভেড়া বিতরন করা হয়েছে। এছাড়াও পাশে দঁাড়ান তারা বিভিন্ন দুর্যোগে। বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেজন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে।
পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়।উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর বন্দবেড় গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই গ্রামের ৩০টি বন্যা কবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমুলক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।এই গ্রামের বাসিন্দা গোলাপী বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে আমাকে ৪ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে এবং সেটি থেকে ২টি বাচ্চা হয়েছে। এখন তার ৩টি ভেড়া; যার বাজারমূল্য ২১,০০০/-।
একই গ্রামের আনোয়ারা বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ১৮০০০/- টাকার সবজি বিক্রি করেছি; যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।জবেদা বেগম এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ফ্রেন্ডশিপের সহায়তায় ৩০টি বস্তায় আদার চাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আধা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ গ্রামের আরো অনেকেই বস্তায় আদা চাষ, সবজি ও ভার্মিকম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।এই গ্রামের আবু আসাদ জানান, আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রযোজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশিপের সহায়তা নিই এবং তারা আমাদেরকে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন।একই গ্রামের কহিনুর বেগম, রমজান আলী ও নুরজাহান বেগম বলেন, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি।
ফ্রেন্ডশিপ” এর ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্ন্য়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ১৪টি চরে এ বছর ৪২০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করেছে।উপজেলা কৃষি অফিসার মো. কাইয়ুম চৌধুরী জানান, উক্ত প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের পূর্বের ন্যায় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্নক সহযোগিতা করবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, রৌমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর ১৮০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে; ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে।