মোঃ লুৎফর রহমান লিটন, সিরাজগঞ্জ :
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটী হাটে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে মাছের সেড নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে মহিষলুটী চৌরাস্তা মৎস্য ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেড ও এলজিইডির বিরুদ্ধে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকায় বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ সংগ্রহের সময় দৈনিক ইত্তেফাকের তাড়াশ সংবাদদাতা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিবর্তনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর গোলাম মোস্তফা হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে তাড়াশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, যা থানার এসআই মো. আলমগীর হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নওগাঁ ইউনিয়নের গোয়াল গ্রামের বাসিন্দা রুবেল আহম্মেদ মহিষলুটী হাটের পাশে নওগাঁ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান, আজম আলী, সোহেল প্রধান ও আইয়ূব আলী নামে তিন ব্যক্তি সাংবাদিক গোলাম মোস্তফাকে মারতে উদ্যত হন। তিনি ঘটনাস্থলে গেলে দেখতে পান, তারা বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন।
হামলার শিকার সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা জানান, ২৩ জানুয়ারি আদালত মহিষলুটী হাটে মাছের সেড নির্মাণের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে হাট কমিটি ও এলজিইডি নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে এবং রাতেও কাজ চালিয়ে যায়। ঘটনার দিনও নির্মাণকাজ চলছিল, তিনি ছবি তুলতে গেলে মহিষলুটী হাটের সভাপতি ও নওগাঁ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজম আলী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল প্রধান ও মহিষলুটী হাটের সদস্য আইয়ূব আলী তাকে মারধর করতে উদ্যত হন এবং তার দুটি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেন। তারা হুমকি দেন, ভবিষ্যতে মহিষলুটী হাটে সংবাদ সংগ্রহ করতে এলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত আজম আলী, সোহেল প্রধান ও আইয়ূব আলী বলেন, সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো অশোভন আচরণ করা হয়নি, শুধু ছবি তোলার সময় তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যা পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার মো. আফছার আলী বলেন, সাংবাদিক গোলাম মোস্তফাকে তাদের সঙ্গে বসতে বলা হয়েছে, যাতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা যায়। যদি তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে তার বিচার হওয়া উচিত।
তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক জানান, তিনি ঠিকাদারকে লিখিতভাবে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ঠিকাদার শামিম হোসেন দাবি করেন, কাজ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে মামলার বাদী নুর হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মহিষলুটী হাট কমিটি ও এলজিইডি তার জমিতে সেড নির্মাণ করছে। সোমবারও যথারীতি নির্মাণকাজ চলতে দেখা গেছে, যা তার জন্য চরম অসহায়ত্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, আদালতের রায় অমান্য করা হলে পুলিশের সহায়তা নেওয়া হবে।
তাড়াশ থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, আদালত থেকে থানাকে নির্দেশ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, দূর থেকে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ চালানোর কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে সাংবাদিক গোলাম মোস্তফার ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।