মুহাঃ মোশাররফ হোসেন:
সৃষ্টি কর্তা তার নিজস্ব গতিতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে এই পৃথিবীকে সাজিয়েছেন। কোথাও সমতল ভূমিতে বিস্তৃত, আবার কোথাও পাহাড়, নদী, জঙ্গল, সাগর, আবার কোথাও জলের অতলে ডুবন্ত বিশাল ভূমি। এই সুন্দর পৃথিবীরই একটি অংশ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমাদের এই লাল সবুজের বাংলাদেশ।
সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাফল্যের সাথে ডজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এ দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ নানা উন্নয়নমুলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশ-বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন ।
কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হলো যে- এদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একটা সুন্দর স্বনির্ভরশীল দেশ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এখনো বন্ধ করতে পারছেনেনা সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি। অতি কষ্টের সহিত বলেছিল প্রিয় নেতা শেখ মুজিব দেশ চালিয়ে অন্যরা পেয়েছে সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি আসলে আমরাতো সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের দেশে বসবাস করছি এর চেয়ে আর বেশি কি আশা করা যায়? যেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়নের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এদেশকে একটি স্বয়ংসম্পন্ন দেশে করার লক্ষে সেখানে উন্নয়নের পাশাপাশি বিস্তার ঘটে চলেছে অপরাধী ও দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদেরও।
দুর্নীতিবাজরা নীতি- আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কোটিপতি হওয়ার লোভে অতি গোপনে নিজেদের স্বার্থ হাচিলের জন্য ঠেলে দিচ্ছে দেশকে। যার ফলে অপরাধ দুর্নীতির কারণে দেশের বড় বড় অর্জন পানিতে মিশে যাচ্ছে। সম্প্রতি সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির খবর মিডিয়াই উঠে আসতে শুরু করেছে তা আমাদের জন্য অত্যান্ত লজ্জার বিষয়। এদের কর্মকান্ডের কারণে এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থা রাখতে পারছেনা দেশের সাধারণ জনগণ এবং দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা লোক হয়ে এরা এতো সম্পাদ গড়ার সুযোগ পেল কী করে? এটা সাধারণ জনগণের প্রশ্ন? এছাড়াও আমাদের মিত্র দেশ ভারতে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা এমনকি আম জনতার মাঝে ঝড় বয়ে চলেছে। এই হত্যাকাণ্ডটি কলকাতা সিআইডি ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের সাথে কারা জড়িত এবং কি কারণে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
গত ২৫ মে ইত্তেফাক ‘চোরাচালানের ৫০০ কোটি টাকা ভাগ নিয়েই খুন হন এমপি আনোয়ারুল আজীম।’ সে নিউজে আসছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে, ‘হত্যাকাণ্ডে নেপথ্য ঘিরে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত অঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে একের পর এক। চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের অন্যতম শক্তিধর সদস্য হলেন এমপির বন্ধু আকতারুজ্জামান শাহীন। চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও এই দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী আমলাসহ এক ডজন খানেক লোকের একটি সিন্ডিকেট। লেনদেনের ভাগবাটোয়ারার ৫শ কোটি টাকা এমপি আনার একাই আত্মসাৎ করেন। এই টাকা নিয়ে শাহীনসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের একাধিক বৈঠক হয়েছে।
টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছিলো পাওনাদাররা। কিন্তু এমপি আনার টাকার ভাগ তো দেননি উল্টো স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। এই ঘটনার পর সিন্ডিকেটের সদস্যরা এমপি আনারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তিনি বেঁচে থাকলে এই অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’
যার কারণে এমপি আনারকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে, যা হিন্দি সিনেমাকেও হার মানিয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বাবা হারা মেয়েটি কান্নাজনিত কন্ঠে তার বাবাকে শ্বাস রোধ করে মেরে দেহকে যারা টুকরো টুকরো করেছে, তাদের সুষ্ঠ বিচারের দাবি করেছে। আমরাও চাই হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি হোক যাতে করে এমন ঘটনার জন্ম এদেশে না হয় এবং আর কোনো সন্তানের এবং সন্তানহারা মা বাবার আহাজারি না দেখতে হয়। এমন নির্মম হত্যা জাতির জন্য লজ্জা ও কষ্টের এবং গোটা দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
কিন্তু এমপি আনারের কৃতকর্মের এমন কিছু অপরাধ তাঁকে হত্যার পর বেড়িয়ে আসছে, যা জেনে শুনে বিস্মিত হয়েছে জাতি। তাহলে এই ঘটনা সূত্রে বোঝা যাচ্ছে দেশের ক্ষমতার শীর্ষস্থানে থাকা কতিপয় ব্যক্তি মাদক পাচারকারী চক্রের মূল হোতা। এদের কারণে মাদকাসক্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাথে দেশে বাড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা। অথচ এরাই মঞ্চে সভা সমাবেশে এমনকি মহান সংসদে ভাষণ দিয়ে বেড়ায় মানবিকতার কথা শোনায়, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে হুংকার দেয়।
এই মাদকের কারণে যুবসমাজ, ছাত্রসমাজ মেধাশক্তি হারিয়ে ফেলে বিপথগার্থী হচ্ছে। এর দায়ভার কার? এখন ক্ষমতা ধরদের নয় কি? যা প্রতিরোধে ব্যর্থ সরকার প্রশাসন ও আমাদেরই’তো বটে। আমরা বাঙ্গালি, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে, এবং ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করেছি, সেই দেশে এমন অত্যাচার, খুন, গুম, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, আমলাতন্ত্র দেশ আমরা চাইনা। আমরা চাই নিজের দেশে স্বাধীনভাবে চলতে, স্বাধীনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে। সুদ, ঘুষ, খুন, গুম বন্ধ করে একটি সুন্দর, স্বয়ংসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশকে দেখতে চাই।
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন,
কবি, লেখক ও সভাপতি
প্রানের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ।