সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

লেখক: mosharraf hossain
প্রকাশ: 1 year ago

ডেস্ক রিপোর্টঃ
সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন
মুহাম্মদ এরশাদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯
সালের ১৪ই জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি ।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে। তার বাবার নাম মৌলভী মকবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। পরে তার পরিবার কুচবিহার থেকে রংপুরে চলে আসে।
সেখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
 মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরের আগস্টে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীর প্রধান হন। ১৯৭৯ সালে  লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি।
১৯৮২ সালের চব্বিশে মার্চ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৩ সাল থেকেই সব রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে ১৯৮৬ সালে গঠন করেন জাতীয় পার্টি। ওই বছর সংসদ নির্বাচনে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করে তার দল।
বিরোধী দলগুলোর টানা আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এই সামরিক শ্বাসক। পরবর্তী সরকার তার নামে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা দায়ের করে। এরপর ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হন। কারাগারে থেকেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন। জেলে থেকে নির্বাচনে বিজয়ের এমন নজির আর নেই ইতিহাসে। কোনো নির্বাচনে না হারার রেকর্ডও আছে তার।
প্রায় ৬ বছর কারাগারে থেকে ১৯৯৭ সালের ৯ই জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন এরশাদ। এর আগে অবশ্য তিনি সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেন। যদিও আড়াই বছর পর সমর্থন প্রত্যাহার করে ১৯৯৯ সালে বিএনপির সাথে জোট বাঁধেন তিনি। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে জয়ী হয়। এরপর ১০ম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ।
এভাবেই কখনও আওয়ামী লীগ কখনও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি সমর্থন জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর সরকার গঠনে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের পরে সরকার গঠনেও জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে সুবিধাবাদী রাজনীতির কারণে কয়েক দফায় বড় ধরনের ভাঙ্গনের মুখে পড়ে দলটি। তারপরও দলটি অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। জীবদ্দশায় দলের দায়িত্ব ছোট ভাই জিএম কাদেরের হাতে তুলে দেন এরশাদ। জিএম কাদের এখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
গত বছর কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জাপায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। দলটি থেকে বাদ পড়েন রাঙ্গাসহ অনেকজন সিনিয়র নেতা। যদিও বছর শেষে সব কিছু মিটমাট হয়েছে, দলে ঐক্যের ঘাটতি নেই বলে গণমাধ্যমকে বার বার আশ্বস্ত করেছেন রওশন ও জিএম কাদের।
error: Content is protected !!