রাজগঞ্জ-মনিরামপুরের সড়ক থেকে বিলুপ্ত  হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বাইসাইকেল “হেলিকাপ্টার”

লেখক: mosharraf hossain
প্রকাশ: 1 year ago

ডেস্ক রিপোর্টঃ

রাজগঞ্জ-মনিরামপুর থেকে বিলুপ্তি হয়ে গেছে বাইসাইকেল ‘হেলিকপ্টার। এখন শুধু গল্প শোনানোর যুগ। এক সময় রাজগঞ্জ- মণিরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলো বাইসাইকেল হেলিকপ্টার। পায়ে প্যাটেল ঘুরিয়ে চালানো হ্যালিকাপ্টার তখন  মানুষের স্মৃতিতে স্থান করে নিয়েছিল। এই বাইসাইকেল হেলিকপ্টারের বহু গল্প রয়েছে রাজগঞ্জ এলাকার বয়োজষ্ঠ মানুষের কাছে। ততকালীন শেখ মুজিবুর রহমান হেলিকপ্টার চালিয়ে বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার তালা থানায় এসেছিলো জনসভা করতে। আর এই হেলিকপ্টার দেখে মানুষের স্বাধ যাগলো বাই সাইকেল দিয়ে হেলিকপ্টার তৈরী করতে, আর তখন থেকেই শুরু হলো বাই সাইকেল হেলিকপ্টার।  আজ থেকে ২০/২৫ বছর পিছনে গেলেই রাজগঞ্জ চৌরাস্তা মোড়ে দাড়িয়ে থাকতো বাইসাইকেল হেলিকপ্টারগুলো। এতেই চড়ে মানুষ গন্তব্য স্থানে খুব সহজে যেতে পারতো। এই হেলিকপ্টারে চালকসহ ৪ জন যাত্রী চলাচল করতে পারতো।
এই হেলিকপ্টার তৈরি করতে প্রয়োজন হতো একটি বাইসাইকেল, তার পিছনের কেরিয়ারে কাঠের তকতার উপর গদি দিয়ে যাত্রীদের বসার জায়গা তৈরি করা হতো। বসার জায়গাটি আরামদায়ক করতে ফোম অথবা টিউব ব্যবহার করা হতো। দুই চাকার এ যাত্রী- বাহী যান ‘হেলিকপ্টার রাত-দিন সব সময় চলাচল করতো রাজগঞ্জ-মণিরামপুর অঞ্চলের রাস্তায় রাস্তায়। এখন এই রোমান্টিক যানটি বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে- বাইসাইকেল হেলিকপ্টার যারা চালাতো, তারা এখন পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন।
তারা কেউ, মোটরসাইকেল, কেউ ইজিবাইক আবার কেউ ইজিভ্যান গাড়ী চালায়। হানুয়ার গ্রামের মোসলেম হোসেন (৭০) বছরের বৃদ্ধ বলেন-সে সময় মোটরসাইকেলের এতো চলাচল ছিলো না। এলাকার কিছু গরীব মানুষ একটা বাইসাইকেল কিনে হেলিকপ্টার তৈরি করে রাস্তার মানুষ বহন করে জিবিকা নির্বাহ করতো। তিনি জানান- ওই সময় রাজগঞ্জ থেকে মণিরামপুর বাজারে বাইসাইকেল হেলিকপ্টারে যেতে ৫ টাকা ভাড়া লাগতো। এইভাবে হেলিকপ্টার চালকরা পায়ে প্যাটেল মেরে বাইসাইকেল চালিয়ে ইনকাম করে খুব কষ্ট করে জিবিকা নির্বাহ করতো। স্থানীয় অনেকেই জানান- ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের দাপটে হারিয়ে গেছে বাইসাইকেল হেলিকপ্টার।
বাইসাইকেল হেলিকপ্টার এখন শুধুই স্মৃতি। রাজগঞ্জের মোবারকপুর গ্রামের মেহের আলী (৭৫) বলেন- আগে দূর-দূরান্তে যাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল এই হেলিকপ্টার। কিন্তু এখন সবাই মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে পছন্দ করে। তিনি আরও বলেন- একসময় এখানে ভ্যানের সংখ্যাও বেশি ছিলো না। বাইসাইকেল হেলিকপ্টারই ছিলো এ এলাকার দ্রুততম যান। যাত্রী পরিবহনকারী বাইসাইকেলগুলোকে এ কারণে হেলিকপ্টার বলা হতো। বাইসাইকেল সবসময় পরিবেশবান্ধব। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও অনেক কম। কিন্তু এখন মোটরচালিত যান বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে যেমন, তেমনি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে।
মুহাঃ মোশাররফ হোসেন,
নিউজবিডিজারনালিস্ট২৪ 
error: Content is protected !!