‘মৌখিকভাবে বিয়ে’, পরিবার না মানায় কুপিয়ে হত্যা

লেখক: Rakib hossain
প্রকাশ: 1 year ago

ডেক্স রিপোর্টার:

বাসায় আরবি পড়াতে গিয়ে সুসম্পর্ক। একপর্যায়ে সবার অগোচরে ছাত্রীকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন আরবি শিক্ষক। পরে পরিবারের কেউ মেনে না নেওয়া এবং পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে ছাত্রীকে রাজি করাতে না পারায় ক্ষিপ্ত হন এ গৃহশিক্ষক।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাইয়ের ছুরি বানিয়ে নেন গৃহশিক্ষক। এরপর সেই ছুরি নিয়ে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে (২১) খুন করা হয়। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওই ছাত্রীর মা ও দুই বোনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।

গত ৮ মে গাজীপুরের সালনায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে কলেজছাত্রীকে হত্যা এবং নিহতের মা ও দুই বোনকে মারাত্মক জখম করার ঘটনায় একমাত্র আসামি মো. সাইদুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতারের পর এসব কথা জানায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বুধবার (১০ মে) রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকায় র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর অভিযানে আরবি শিক্ষক সাইদুল গ্রেফতার হন।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতার সাইদুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ২০২০ সালে করোনাকালীন রাবেয়া তার দুই বোন ও মাকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে সাইদুলকে নিয়োগ দেন। এ সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত সে বাসায় যাওয়া-আসা করতেন।

একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক হয়। বিভিন্ন সময় ভিকটিমের প্রতি কুনজর দেয় এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সাইদুল। ৫-৬ মাস আরবি শেখানোর পর তার কাছে আরবি পড়া বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভুক্তভোগীকে মৌখিকভাবে বিয়ে করে। বিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

২০২২ সালের অক্টোবরে ভিকটিম গাজীপুর সদর থানায় তাকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু দুই মাস ধরে কলেজ এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুক্তভোগীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, একপর্যায়ে সাইদুল জানতে পারে ভুক্তভোগী উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে ভিকটিম ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ মে বিকেলে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পরদিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে সরাসরি তার রুমে ঢুকে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে আঘাত করে।

এসময় ভুক্তভোগীর চিৎকারে তার মা ও দুই বোন এগিয়ে এলে তাদেরও ছুরি দিয়ে কুপিয় জখম করে পালিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে নিহতের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাবেয়া ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্মাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আইইএলটিএস পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন।

গ্রেফতার সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদরাসা থেকে দাওরা পাস করে গাজীপুরের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এর পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন।

দুই মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দিয়ে শুধু বাসায় আরবি পড়াতেন। ঘটনার পর থেকে নিজের চুল-দাড়ি কিছুটা কেটে চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যান। সেখান থেকে তাকে গত রাতে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

error: Content is protected !!