ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও এগারটি ইউনিয়নে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে খরিপ -২ মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকগণকে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয় দুই ধাপে। এই প্রকল্পের ৬ শত কৃষকের প্রতি জন কৃষক পেয়াজের বীজ ও উপকরণের সাথে ২৮ শত করে টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম রনি কোন কৃষককে এখনো পর্যন্ত এই টাকা দেননি। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পে প্রতি জন কৃষক ১ কেজি পেঁয়াজের বীজ,২০ কেজি ড্যাপ সার, ২০ কেজি এমওপি সার, সুতলি ৫ শ গ্রাম, পলিথিন ১ বান্ডিল ও ৫০ মিলির এক বোতল কীটনাশক পেলেও পাইনি ২ হাজার ৮ শত করে প্রণোদনার টাকা। উপজেলার ৬ শত জন কৃষকের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের প্রণোদনার সর্বমোট ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা সরকারি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব ফরমায়েশি জারি করে কৃষকদের না দিয়ে আটকে রেখেছেন কৃষি কর্মকর্তা।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পে উপকারভোগী কৃষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত উপজেলার জামাল, রায়গ্রাম, সুন্দরপুর দুর্গাপুর ও বারোবাজার ইউনিয়নের যথাক্রমে মেম্বার শের আলী ও তার ছেলে রানা মিয়া, চান মিয়া, এনামুল হক, অশোক ঘোষ, আলমগীর খাঁ, মিজানুর রহমান, মুকুল হোসেন আজিজুর রহমান ও সালাউদ্দিন আহমেদ নামের কৃষকরা অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সময়মতো বীজ, উপকরণ ও টাকা না পেলে আমরা কিভাবে পেঁয়াজের বীজ বপন করব ? পেঁয়াজ লাগাতে অনেক খরচ। সেই জন্য সরকার টাকাও দিয়েছে। কিন্তু কৃষিকর্মকর্তা টাকা দিচ্ছেন না। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা উল্টো ঝাড়ি দেই। নাম লেখে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে বীজ ও উপকরণ দিয়েছে কিন্তু এখন যদি কেউ পেঁয়াজের বীজ না লাগায় তাহলে তার টাকা ফেরত যাবে বলছেন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। এ কথার গ্যারান্টি কি? টাকা ফেরত যাচ্ছে কিনা তাতো আর আমরা দেখতে যাচ্ছি না। তবে কৃষকদের পাওনা কৃষকদের সময়মতো বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো অনেকেই পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হতো বলেও তারা মনে করেন।
উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া রায়হানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন দুই ধাপে এই ইউনিয়নে নির্বাচিত প্রত্যেক কৃষকই পেঁয়াজের বীজ রোপন করেছেন। যদিও তার এই বক্তব্যের সত্যতা মাঠ পর্যায়ে মেলেনি। প্রোনোদনার টাকা কেনো এখনো দেওয়া হয়নি সে ব্যাপারে অফিস ভালো বলতে পারে বলেও তিনি জানান।
কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম রনি জানান,গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পে উপকারভোগী কৃষকদের প্রণোদনার টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। এইসব কৃষকরা যদি পেঁয়াজ না লাগান তাহলে তাদের টাকা দেওয়া হবে না বলে একপ্রকার চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে মাত্র। পেঁয়াজ না লাগালে ওই কৃষক বীজসহ সব উপকরণ পাওয়ার পরেও তাকে টাকা দেওয়া হবে কিনা তা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি।
ঝিনাইদহ কৃষি সসম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ- পরিচালক আজগর আলী বলেন,স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করার কারণে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কৃষকই পলিটিক্যাল হয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এইসব কৃষকরা বীজ রোপন করেন না, অনেকে আবার বীজ, সার ও উপকরণ বিক্রিও করে দেন। যে কারণে ভালোভাবে মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে উপকারভোগী কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা টাকা অতিসত্বর প্রদান করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আবু হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পের প্রণোদনার অর্থ এখনো কেন কৃষকরা পেল না সে ব্যাপারে আমি অবগত নয়। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ কিভাবে কি করেছে সেটা ভালোভাবে জেনে দেখি। সরকারের এত বড় উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে যদি কোন অনিয়ম থাকে অবশ্যই সেব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া মহতী উদ্যোগকে অবহেলা করছে কৃষি বিভাগের কালিগঞ্জ উপজেলার কর্মকর্তাগণ। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না বলে সাধারণ কৃষকরা মনে করছেন। শুধু তাই নয় ; গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রকল্পের অর্থ আটকে দিয়ে এই প্রকল্পকে বাধাগ্রস্তও করছেন বলে মনে করেন তারা । তাই অতিসত্বর কৃষকদের প্রণোদনার অর্থ তাদের নিজ নিজ হিসেবে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।