হুমায়ুন কবির,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের বাদুরগাছা গ্রামে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক শাহ্ গাজী, কালু, চম্পাবতী মাজার শরীফে আজ (বৃহস্পতিবার – ১৪ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী পবিত্র ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গাজী কালু চম্পাবতীর মাজারে বাংলা বছরের ফাল্গুন এবং ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মহা ঔরস অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ওরস উপলক্ষে বুধবার দিবাগত রাতে রওজা শরীফ ডাবের পানি, গরুর দুধ এবং গোলাপ জল দিয়ে ধৌত করার মধ্য দিয়ে মূলত ঔরসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা দু’একদিন আগে থেকেই আসতে থাকেন। দূর-দূরান্ত থেকে আগে যে সব ভক্তরা মাজার শরীফে পৌঁছে যান তারা মাজারের আশপাশে খোলা জায়গায় তাঁবু টানিয়ে থাকেন।ভক্তবৃন্দ ঔরসের দিন অনুষ্ঠিত মিলাদে অংশগ্রহণ করেন। আবার নিজ নিজ মনবাসনা পূরণের জন্য অনেক ভক্তকে মাজার শরীফে হাস, মুরগী ও ছাগল মানত করতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার মাজারের সামনে দন্ডায়মান বটগাছে মনোবাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে টুকরা পলিথিন গিট মেরে বেঁধে রাখেন ।প্রতিবছর এই দিনে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রায় লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটে থাকে। শুধু তাইনা ;ঐতিহাসিক এক দর্শনীয় স্থান হিসেবে বারবাজারের গাজী-কালু-চম্পাবতীর মাজার শরীফে দিন দিন সকল সম্প্রদায়ের ভক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শ্রীরাম রাজার বেড় দীঘির দক্ষিণ পাশে ৩টি পাশাপাশি কবরের অবস্থান । মাঝখানে বড় কবরটি গাজীর, পশ্চিম দিকের টি কালুর এবং পূর্বের ছোট কবরটি চম্পাবতীর বলে পরিচিত। মাজার সন্নিহিত দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি প্রাচীন বটগাছ আছে। এই বটগাছের তলদেশে একটি শূণ্যস্থান দেখা যায়। এটিকে অনেকে কূপ কিংবা অন্য কোন কবর বলে মনে করেন।প্রতিবছর এই মাজারকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত ঔরসে এই এলাকার জনগনের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।মাজারের চারপাশে মেলা বসে। সেখানে নানা রকম পণ্যের পরসা সাজিয়ে বসে দোকানীরা।এরমধ্যে রয়েছে খেলনা, মিস্টি,মাটির তৈজসপত্র, কাঠের ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। শিশুদের জন্য থাকে নাগরদোলা ও নানা খেলাধুলার আয়োজন।ওরস কেন্দ্রিক এই মেলায় ভক্তগণের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্থানীয় জনগণের উপস্থিতিতে তা এক মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। কুস্টিয়া থেকে আসা সুফিয়া পাগলী নামের এক ভক্ত জানান,আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই মাজারের ওরসে আসি। ওরসে আসতে আমার ভালো লাগে। এই মাজারের আরো অনেক ভক্তের সঙ্গে দেখা হয়,কথা হয় সবমিলিয়ে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। মানিকগঞ্জ থেকে আসা আব্দুর রাজ্জাক নামের আরেক ভক্ত জনান,আমার এলায় এই মাজারের অনেক ভক্ত এখানে ওরসের সময় আসেন। আমিও প্রতিবার তাদের সাথে আসি।বাদুরগাছার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মোস্তফা জানান,ওরস উপলক্ষে আমাদের এলাকায় এক ধরনের উৎসব বিরাজ করে। বাড়ি বাড়ি আত্মীয় স্বজন আসে ওরসে যাওয়ার জন্য। গাজী কালু ও চম্পাবতী মাজারে অনুষ্ঠিত ওরস সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন জন্য মাজার পরিচালনা কমিটি নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে।ঔরসের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মাজার কমিটির সভাপতি ও বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালম আজাদ জানান,আমাদের এখানে মাজারকে কেন্দ্র করে যে ওরস অনুষ্ঠিত হয় সে উপলক্ষে মজার প্রাঙ্গনে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। বিপুলসংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেদিকে আমরা সর্বদা দৃষ্টি রাখি। দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভক্তদের জন্য থাকা খাওয়া, অস্থায়ী শৌচাগার স্থাপন এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকি।আর আমাদের সার্বিক কাজে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে থাকে। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, ওরসের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ সর্বদা সচেস্ট থাকে।