আজ ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস

লেখক:
প্রকাশ: 1 year ago

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এ দিনে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক হত্যাকান্ড ঘটেছিল। বেদনাবিধুঁর এ দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারের নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁরই হাতে গড়া সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। লাখো প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৪ বছরের মাথায় এমন হত্যাকান্ডে সারা বিশ্ব স্থম্ভিত হয়েছিল।

বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, দেশের স্থপতি ও প্রেসিডেন্টকে এমন নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার বড় ছেলে শেখ কামাল, দ্বিতীয় ছেলে শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে ও সাবেক ছাত্র নেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তবে সেই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এসব খুনিকে বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারের উদ্যোগ নেয় এবং বিচারিক কাজ শেষে ২০১০ সালে আদালতের রায় অনুসারে ৫জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে অন্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু না জন্মালে বাংলাদেশ নামের কোনো দেশ হতো না। এ কথা বলা যেতেই পারে। সে অর্থেই বলা যেতেই পারে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। ব্যক্তিনাম ও দেশনাম এভাবে একাকার হয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে বিরল। জাতিকে উজ্জীবিত ও প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান একক, এটা বলাই যায়। তিনি এদেশের মানুষের মহান নেতা। জাতির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন তিনি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে। একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধু আমাদের অশেষ ঋণে আবদ্ধ করে গেছেন।

আজ বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তাঁর আদর্শ আছে, তাঁর স্বপ্ন-প্রত্যাশা আছে, আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাঁর আদর্শ, তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্যেই এদেশের মানুষের মাঝে বেঁচে আছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি একটি বিষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ কর তে চেয়েছিলেন। তিনি এ দেশের গরীব মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে চেয়েছেন আজীবন। এ সব তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে জানতে পারা যায়।

বঙ্গবন্ধু একটি সমৃদ্ধ, সুখি, অবিচারহীন ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তিনি জীবনব্যাপী রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার কাজ শুরু করেছিলেন, যা শেষ করে যেতে পারেননি। এর আগেই ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুর এ অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ এখনও রয়েছে। যদিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ কিছুটা বিচ্যুত হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনা।

মহামারি করোনাকালীন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রায় সংকটবিহীনভাবে এগিয়ে চলেছে।

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা রয়েছে। তবে এ কথা বলা যায়, বাংলাদেশ এখন একটি সমৃদ্ধশালী দেশের পথে রয়েছে।
আশা করা যায়, বঙ্গবন্ধুকন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতি অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছাবে।

error: Content is protected !!